হযরত জুলাইবির (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো আমাকে বিয়ে করিয়ে দিতে চাচ্ছেন ঠিক, কিন্তু ঘটনাক্রমে অবস্থা যদি এই দাঁড়ায় যে, আমাকে কেউ পছন্দ করছে না! তখন?
আল্লাহর নিকট মোটেই তুমি অপছন্দনীয় নও। বললেন, নবীজি (সাঃ) । এরপর থেকেই নবীজি (সাঃ) হযরত জুলাইবির (রাঃ) এর বিয়ের পাত্রী খুঁজছিলেন। একদিন তাঁর খেদমতে উপস্থিত হয়ে এক আনসারী সাহাবী তাঁর এক বিধবা মেয়ের বিবাহের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আবদার পেশ করলেন। তখন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেন- তোমার মেয়েকে আমার কাছে বিবাহ দিয়ে দাও।
একথা শুনে আনসারী সাহাবী বেশ খুশি হলেন। বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেন, আমি নিজের জন্য বলছি না। সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তবে কার জন্যে হে আল্লাহর রাসূল! জুলাইবিবের জন্য।
জুলাইবিব! হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমি মেয়ের মায়ের সাথে একটু পরামর্শ করে আসি। নবীজি (সাঃ) বললেন, ঠিক আছে। পরামর্শ করে এসো। আনসারী সাহাবী বাড়ী গেলেন। স্ত্রীকে বললেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তোমার মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন।
স্ত্রী বললেন, উত্তম প্রস্তাব। এ প্রস্তাবে আমাদের সাড়া দেওয়া উচিত। কিন্তু তিনি নিজের জন্য এ প্রস্তাব দেননি।
তবে কার জন্যে? জুলাইবিবের জন্য! না এ হয় না। আমরা জুলাইবিবের কাছে মেয়ে বিয়ে দেব না। এমন কতজনকেই তো আমরা ‘না’ বলে দিয়েছি।
আনসারী সাহাবী স্ত্রীর অমতে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন, একদিকে নবীজি (সাঃ)-এর প্রস্তাব, অন্যদিকে স্ত্রীর অমত ও মেয়ের ভবিষ্যৎ- এমতাবস্থায় কী করব আমি!
আনসারী সাহাবীর চিন্তা এখনো শেষ হয়নি। ঠিক এমন সময় সকল দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে পর্দার আড়াল থেকে মেয়েটি উচ্চকন্ঠে বলে উঠল, বাবা! আপনাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব কে পাঠিয়েছেন?
আনসারী বললেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ)। মেয়ে বললেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, আর আপনি সেই প্রস্তাব কবুল করবেন কি করবেন না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন? না বাবা! এখানে দুশ্চিন্তার কিছুই নেই। আপনি আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে চলুন। তিনি অবশ্যই আমার অকল্যাণ চাইবেন না।
মেয়ের কথা শুনে সাহাবী সম্মতি ও স্পষ্ট উচ্ছারণের কথা জানালেন।
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ও বেশ খুশি হলেন এবং হযরত জুলাইবির (রাঃ)-এর সাথে ঐ মেয়ের বিয়ে পড়িয়ে দিলেন। তারপর নবদম্পতির জন্য এই দোয়া করলেন-
হে আল্লাহ! তুমি ওদের জীবনে কল্যাণের ধারা বইয়ে দাও। ওদের জীবনকে কষ্ট-ক্লেশের সম্মুখীন তুমি করো না। নবদম্পতির বিয়ের কয়েকদিন যেতে না যেতেই জিহাদের ডাক এল। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) – এর সাথে জিহাদে বের হযরত জুলাইবিব (রাঃ)ও।
যুদ্ধ শেষে খোঁজেখুঁজি করে অনেককেই পাওয়া গেল না। এক পর্যায়ে নবীজি (সাঃ) বললেন, আমি যে জুলাইবিবকে দেখছি না!
এবার সাহাবায়ে কেরাম হযরত জুলাইবিবের খুঁজে বের হলেন। কিন্তু গোটা যুদ্ধক্ষেত্রে তন্নতন্ন করে খুঁজে কোথাও তাঁকে পেলেন না। অবশেষে আরো খোঁজাখুঁজির পর তাঁকে পাওয়া গেল নিকটবর্তী অন্য একটি স্থানে- শহীদ অবস্থায় পাশে পড়ে আছে সাতজন কাফেরের কর্তিত লাশ। অবস্থা দেখে বুঝাই যাচ্ছে, অকুতোভয় এই সাহাবী বীর বিক্রমে যুদ্ধ করতে করতে এই সাত কাফেরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে নিজেও পান করেছেন শাহাদাতের অমীয় সুধা।
খবর পেয়ে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাঁর লাশের পাশে এসে দাঁড়ালেন । তারপর বললেন, সে সাতজনকে কতল করেছে অতঃপর শহীদ হয়েছে। সে আমার আর আমি ওর! এরপর নবী করীম (সাঃ) নিজেই তাঁকে তুলে নিলেন এবং তাঁর জন্যে একটি কবর খননের নির্দেশ দিলেন।
কবর খনন শেষ হওয়ার পর রাসূল (সাঃ) নিজ হাতে হযরত জুলাইবিব (রাঃ) এর লাশ কবরে রাখলেন। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আনসার সাহাবীদের মধ্যে জুলাইবেরের স্ত্রীর চেয়ে অধিক দানশীলা মহিলা আর ছিলেন না। তাঁর শাহাদতের পর তাঁর বিধবা স্ত্রীর কাছে অনেকেই বিবাহের পয়গাম নিয়ে ছুটে এসেছেন।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! দেখলেন তো! আল্লাহর রাসূলের ইচ্ছার সামনে একজন মহিলা সাহাবী কিভাবে নিজের ইচ্ছাকে বিলীন করে দিলেন। কিভাবে তিনি একজন অসুন্দর লোককে নিজের স্বামী হিসেবে বরণ করে নিলেন। হ্যাঁ, কোনো মুসলমান যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যকে স্বীয় জীবনের সবচেয়ে বড় কর্তব্য বলে মনে করে তখন তাঁর জন্য সবকিছুই সম্ভব ও সহজ হয়ে যায়। আর অবশেষে তারাই সফল হয়। যেমন আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন, যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে সাবধান থাকে, তারাই সফলকাম। আল্লাহ পাক আমাদেরকেও জীবনের বাঁকে বাঁকে তাঁর এবং তাঁর রাসূলের অনুকরণ অনুসরণ ও পূর্ণ আনুগত্য করার তাওফীক নসীব করুণ। আমীন। [সূত্র” ইন্নাহা মালিকাহ]
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। (আদর্শ স্বামী স্ত্রী ২)
এরপর পড়ুন >> একজন আদর্শ রমণী রাজিয়ার কথা
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.