প্রিয়তমার সাথে কিছুক্ষণ, লেখক রাসূল (সাঃ)-মের জীবনের ছোট একটি ঘটনা তাঁর বইতে তুলে ধরেছেন এবং সাথে দাম্পত্য জীবনে সুখি হতে লেখক কিছু পরামর্শ ও উপদেশও দিয়েছেন। দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে লেখকের উপদেশ অনুসরণ করা যেতে পারে।
প্রিয়তমার সাথে কিছুক্ষণ!
প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে আদর্শ স্বামীর মূর্ত প্রতীক দয়ার নবী (সাঃ) বললেন, কী দেখছ আয়েশা? কী ভাবছ তুমি? এমন করে বিস্ময়ভরা নয়নে কী অবলোকন করছো?
হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, আপনার কপালে জমে ওঠা ঘামের বিন্ধুগুলোতে যে আলো খেলা করছে, যে চমক সৃষ্টি হয়েছে, আজ যদি কবি আবু আলী আল হুযালী বেঁচে থাকতেন, তাহলে তিনি বুঝতে পারতেন তার কবিতার উপযুক্ত সত্তা একমাত্র আপনি।
প্রিয়নবী (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হুযালী তার কবিতায় কী বলেছিল? কী ছিল তার কবিতায় মূল উপজীব্য?
হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, হুযালী বলেছিলেন,
‘আমি যখন তার ললাটের দিকে তাকালাম
তখন আমার মনে হচ্ছিল
যেন আকাশে বিদ্যুৎ খেলা করছে।’
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কবিতা শ্রবণ করে সীমাহীন খুশী হলেন। বললেন, তোমার এ কবিতা শুনে আমি এতটা খুশী হয়েছি যা ইতিপূর্বে কখনও হইনি।
সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকা। এই তো হলো দাম্পত্য জীবনের সুখ ও স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু এই সুখ-চিত্র কি প্রতিটি স্বামী-স্ত্রীর বেলায় দেখা যায়? সকল স্ত্রী কি স্বামীকে খুশী করার জন্য এ ধরণের হৃদয়ছোঁয়া কথা বলে? সবাই কি চেষ্টা করে স্বামীর মান-সম্মান ও মর্যাদা কে বুলন্দ করতে? এটা কি স্ত্রীর দায়িত্ব নয়?
অনুরূপভাবে স্বামীরও কি উচিৎ নয়, স্ত্রীকে আদরে আহলাদে ভরপুর করে রাখা। তার ছোট বড় সব, সব কাজ ও সকল গুণকে মূল্যায়ন করা, গুরুত্ব দেওয়া। হ্যাঁ, উচিৎ। শুধু উচিৎই নয়, এটা ধর্মীয় দায়িত্ব ও সওয়াবের কাজও বটে। তাই স্ত্রী স্বামীকে আর স্বামী স্ত্রীকে এমন এমন কথা বলবে – যাতে মনে আনন্দ আসে, হৃদয়ে পুলক অনুভব হয়। একে অপরের ছোটখাটো জিনিসগুলোকেও বড় করে তুলে ধরবে। স্ত্রী মনে করবে আমার এসব হৃদয় নিংড়ানো বাক্যাবলী ও সুমধুর আচরণ দ্বারা খুশী হবে ঐ লোকটি যাকে আমি জীবনের চেয়ে বেশী ভালোবাস। যার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে আমার অস্তিত্ব। যার সুখ আমার সুখ, যার দুঃখ আমার দুঃখ। যে না থাকলে আমার জীবন চলা বড়ই দুস্কর হত। যাকে ছাড়া আমার জীবন অর্থহীন, অকেজো। যাকে খুশি করে মৃত্যুবরণ করতে পারলে আমার জন্য জান্নাত ওয়াজিব।
প্রিয় বন্ধুগণ! এমন যেন না হয় যে, স্বামী স্ত্রী একে অপরের ছোট ছোট গুণ তো দূরের কথা, বড় বড় গুণগুলোকেও অবলীলায় অবহেলা করে চলে। মূল্যায়ন করে না মোটেও। যেমন, একজন যদি গুণগুণ করে গজল গায়, তো আরেকজন বিদ্রুপের হাসি হেসে বলে-ইস! সুরের মূর্ছনায় তো বায়ুর গতি থেমে যাচ্ছে, সূর্যের চলা বোধ হয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!!
আচ্ছা বলুন তো, এভাবে বলাটা কি উচিৎ হলো? তার তো উচিৎ ছিল, এভাবে বলা যে, মাশাআল্লাহ! বেশ সুন্দর হচ্ছে। বলুন। বলতে থাকুন। আপনার গজল আমার কাছে খুব ভালো লাগে।আপনাকে যেমন আমি বেশি ভালোবাসি, তেমনি আপনার সুরকে আরো বেশি ভালোবাসি। আপনি যখন সুরেলা কন্ঠে গজল শুরু করেন তখন আমি অন্য জগতে চলে যাই, ভুলে যাই নিজের অস্তিত্বের কথাও-ইত্যাদি।
প্রিয় পাঠক! এটি একটি উদাহরণ মাত্র। প্রকৃত পক্ষে এ ধরণের হাজারো ক্ষেত্রে আছে, যেখানে সঙ্গিকে খুশি করার সহজ মওকা পাওয়া যায়। আসলে দাম্পত্য জীবনকে যারা সুখী করতে প্রয়াসী হয়, তারা অহরহ এ ধরণের সুযোগ পেয়ে যায়। তখন তারা এই সুযোগকে কাজেও লাগায়। এতে দাম্পত্য সম্পর্ক মধুর থেকে মধুর হয়। হয় সুন্দর থেকে সুন্দরতর। ঘরের পিছনের দরজা দিয়ে তখন পালিয়ে যায়-যাবতীয় কলহ – বিবাদ ও মনোমালিন্য । ঘরটা তখন পরিণত হয়-জান্নাতের টুকরায়। অনাবিল শান্তির এক শীতল হাওয়া ঝিরঝির করে বয়ে যায় ঘরের প্রতিটি কোণায়। তাই দোয়া করি, আল্লাহ পাক প্রতিটি দম্পতিকে প্রেম, ভালোবাসা ও দয়া-মায়ায় পরিপূর্ণ একটি জান্নাতী পরিবেশ দান করুন। আমীন। [সূত্রঃ বেহনূঁছে খেতাব]
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম (আদর্শ স্বামী স্ত্রী ২)
এরপর পড়ুন : পতিপ্রাণা সাওদা।
আরও জানুন: রাসূলের পবিত্র স্ত্রীদের নাম ও নামের অর্থসহ পরিচয়!
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, প্রিয়তমার সাথে কিছুক্ষণ গল্প টি পড়ে ভালো লাগলে এটি শেয়ার করুন। এবং আরও দারুণ সব গল্প পড়তে নিয়মিত আমার বাংলা পোস্ট.কম এ আসুন।
Please follow our Facebook, Twitter, Instagram, Linkedin, Pinterest, Tumblr, And Youtube channels for more updates.