দুই রমনীর হৃদয়স্পর্শী কাহিনী (ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া ঘটনা)

দুই রমনীর হৃদয়স্পর্শী কাহিনী, লেখক ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া ও দাসীর জীবনের ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনা টি পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন। ইসলাম গ্রহণের জন্য মিশরের তৎকালীন রাজা ফেরাউন  তার দাসী ও স্ত্রী আসিয়া কে নির্মম শাস্তি দিয়েছিলেন। তাহলে আসুন ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া ও দাসীর হৃদয়স্পর্শী কাহিনী পড়া শুরু করা যাক…

দুই রমনীর হৃদয়স্পর্শী কাহিনী। The life story of Pharaoh wife.

ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া ঘটনাফেরাউনের এক দাসী। আল্লাহ পাক তাঁর ভাগ্যে রেখেছিলেন হিদায়েতের দৌলত, অমূল্য সম্পদ। একদিন ঐ দাসী মুসলমান হয়ে যায়। আশ্রয় গ্রহণ করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায়। ঈমানের আলো ছড়িয়ে পড়ে হৃদয়ের প্রতিটি কোণায়।

দাসী তাঁর ঈমানের কথা গোপন রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। সে চেয়েছিল, এ সংবাদটি কেউ না জানুক–অন্তত খোদার দাবীদার মহাপাপী ফেরাউন। কিন্তু তাও পারা যায়নি। ধীরে ধীরে এক সময় ফেরাউনের কানেও পৌঁছে যায়–দাসীর ঈমান আনয়নের সংবাদ।

ফেরাউন দাসীকে ডেকে পাঠায়। খবরের সত্যতা জানতে চায়। দাসী অকপটে সবকিছু স্বীকার করে। সুতরাং আর যায় কোথায়!

দাসীর ছিল দুই কন্যা। তন্মধ্যে একজন দুগ্ধপায়ী শিশু

একটি বড় পাত্রে তেল গরম করতে নির্দেশ দেয় ফেরাউন। তেল টগবগ করে ফুটাতে শুরু করলে দাসীকে সম্বোধন করে সে বলে-আমাকে খোদা মানো। নইলে তোমার সন্তানরা এখনই দুনিয়া থেকে চিরতরে বিদায় নিবে। তাদেরকে আমি এই ফুটন্ত তেলে ডুবিয়ে মারব। নির্মমভাবে হত্যা করব। তারপর মারব তোমাকেও। সুতরাং ভেবে দেখো, মূসার খোদাকে খোদা মানবে, নাকি আমাকে।

ফেরাউনের কথায় দাসীর ঈমান বিদ্যুতের ন্যায় জ্বলে ওঠে। ঝড়ের ন্যায় বেগবান হয়। সে অবিচল কণ্ঠে বলে-আরে মিথ্যা খোদা! আমার তো মাত্র দুটি মেয়ে। যদি আমার আরও কয়েকজন মেয়ে থাকত, তাদেরকেও আমি খোদার রাহে বিসর্জন দিতাম। উৎসর্গ করতাম। তবু তোর মত নাফরমানের আনুগত্য স্বীকার করতাম না। সুতরাং তুমি যা করতে চাও করো। কোনোই পরোয়া নেই আমার। আমি তো এ ত্যাগের প্রতিদান চাইব–ঐ আল্লাহর কাছে যিনি তোমারও খোদা।

নিষ্ঠুর ফেরাউন আর দেরী করল না। প্রথমে তুলে নিল বড় মেয়েটিকে। ছেড়ে দিল ফুটন্ত তেলে। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির জিবন প্রদীপ নিভে গেল। ভুনা হয়ে ভাসতে লাগল ফুটন্ত তেলের উপর। আহা! ফেরাউন কত পাষাণ!!

কোনো মা যদি তাঁর সন্তানকে এভাবে মরতে দেখে তাহলে কেমন লাগবে ঐ মায়ের? কেমন হবে তাঁর অনুভূতি? এ অনুভূতি কি মানুষের ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব? না, মোটেও সম্ভব নয়; অসম্ভব। একেবারেই অসম্ভব। এই ভাব ব্যক্ত করতে পৃথিবীর সকল ভাষা অক্ষম। এখানে এসে পৃথিবীর সকল সাহিত্যই বুঝি অকেজো হয়ে যায়! ভাষা অপরাগতা প্রকাশ করে। হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়।

মেয়েটির তেলে নিক্ষেপ করার সাথে সাথে আল্লাহর রহমতের সাগরে ঢেউ ওঠে। সরে যায় মায়ের সন্মুখ থেকে পার্থিব জগতের পর্দা। অদৃশ্য জিনিস দৃশ্যমান হয়ে ওঠে তাঁর চোখের সামনে। মা পরিস্কার দেখতে পায়, মেয়ের রুহ তাঁর শরীর থেকে আলাদা হয়ে উড়ে যাচ্ছে আকাশপানে। আর যেতে যেতে বলে যাচ্ছে–ধৈর্য ধরো মা। বেহেশতে দেখা হবে।

এবার দ্বিতীয় মেয়ের পালা। দুগ্ধপায়ী শিশুর পালা! বুকের মানিকের পালা!! নাড়ি ছেঁড়া ধনকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা কল্রার পালা!!!! কঠিনপ্রাণ ফেরাউন আবার এগিয়ে যায় মায়ের দিকে। কেড়ে নেয় বুকের মানিককে। ছেড়ে দেয় ফুটন্ত তেলে। মা তাকিয়ে দেখেছে–তার চোখের সামনে তাঁর কলিজার টুকরা সন্তান উত্তপ্ত তেলে ভাজা ভাজা হচ্ছে। ওহ! কী নির্মম দৃশ্য!! কি হৃদয়বিদারক চিত্র।

পুনরায় ওঠে গেল অদৃশ্যের পর্দা। মা দেখল, দুগ্ধপায়ী শিশুটির আত্মাও চলে যাওয়ার সময় বলছে–মা! ধৈর্য ধরো। তোমার জন্য অপেক্ষা করছে মহা পুরস্কার। ঐ দেখো বেহেশত। আমরা শীঘ্রই মিলিত হবো বেহেশতের বালাখানায়!!

সবশেষে এলো মায়ের পালা। নরপশু ফেরাউন তাকেও ডুবিয়ে দিল ফুটন্ত তেলে। হত্যা করল নির্মমভাবে।

দুই কন্যার জীবন গেল। নিজের জীবনও উৎসর্গ করল। তবু দাসী ঈমান ছাড়ল না। আনুগত্য স্বীকার করল না নিষ্ঠুর ফেরআউনের।

উত্তপ্ত তেলের পাত্রে ভাজা ভাজা হয়ে হাড্ডিগুলো একত্র করে মাটিতে পুঁতে রাখল।

এই ঘটনার প্রায় দুই হাজার বছর পর। মেরাজে যাচ্ছিলেন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি যখন বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে আকাশের দিকে যাত্রা করেন তখন মাটির নিচে থেকে বেহেশতের সুঘ্রাণ এসে তাঁকে বিমোহিত করে। এই পাগল করা খুশবো পেয়ে অভিভূত হন তিনি। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন–জিবরাঈল! বেহেশতের খুশবো পাচ্ছি। কোত্থেকে আসছে এই খুশবো!? কোত্থেকে আসছে এই সুঘ্রাণ!?

জিবরাঈল আ. বলেন–আজ থেকে দুই হাজার বছর আগে এক ঈমানদার দাসীকে তাঁর দুই কন্যাসহ ফুটন্ত তেলে ডুবিয়ে হত্যা করেছিল নিষ্ঠুর ফেরাউন। তারপর তাদের হাড়গুলো পুঁতে রেখেছিল মাটিতে। আপনি এখন  যে সুবাস পাচ্ছেন তা ঐসব হাড় থেকেই বিচ্ছুরিত সুবাস। সুবহানাল্লাহ!

আবার ফিরে আসি পূর্বের কথায়। ফেরাউনের এই বিভৎস কাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছিল তাঁর পরিষদের লোকজন, পরিবারের লোকজন। প্রত্যক্ষ করেছিল তাঁর প্রাণপ্রিয় স্ত্রী আসিয়াও।

এই ঘটনা আসিয়ার মনোজগতে দারুণভাবে নাড়া দেয়। প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করে। ভাবে যে, এত শক্তিশালী কোন সেই জিনিস, যার কারণে একজন মা তাঁর চোখের সামনে সন্তান বিসর্জন দিতে পারে! অকাতরে বিলিয়ে দিতে পারে নিজের জীবনটাও!! অবশেষে তাঁর বিশ্বাস হয়–একমাত্র সত্য প্রভু ছাড়া আর কারো জন্যে এভাবে জীবন দেওয়া যায় না।

আসিয়ার বুঝে আসে, দাসীর দীনই প্রকৃত দীন। তাঁর পথই নির্ভুল পথ। তাঁর ঈমানই খাঁটি ঈমান। অতএব জীবনের কামিয়াবীর জন্য এই দীনকেই গ্রহণ করতে হবে, এই ঈমানই আনয়ন করতে হবে। চলতে হবে–এই পথেই। সুতরাং আসিয়া আর কালক্ষেপন করল না। মূসা আ. এর রবের উপর ঈমান এনে মুসলমান হয়ে গেল।

আসিয়া ছিল ফেরাউনের সবচাইতে প্রিয় জীবনসঙ্গিনী। সকলের চেয়ে সে বেশি ভালোবাসত তাকেই। তাই ফেরাউন যখন শুনল, আসিয়া মুসলমান হয়ে গেছে, তখন তাঁর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। শুধু তাই নয়, গোটা মহলে নেমে এল শোকের ছায়া।

ফেরাউন নানা কৌশল অবলম্বন করল আসিয়াকে ফিরিয়ে আনতে। নানাভাবে বুঝাল সে। কিন্তু তাঁর সব চেষ্টা ব্যর্থ হলো। অবশেষে তাকে জেলখানায় বন্দী করল। ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট দিল। কিন্তু ঈমান এমন এক শক্তি যা আঘাত পেলে কেবল বেড়েই চলে। যত শক্তভাবে আঘাত করা হয় ততই তাঁর শেকড় গভীরে চলে যায়। যই বাধা আসে, যত প্রতিকূলতগা আসে ঈমান তত মজবুত হয়, শক্তিশালী হয়। জ্বলে ওঠে সূর্যের মতো দীপ্ত হয়ে। তাইতো এক দুর্বল নারী ক্ষুধার যন্ত্রণা সয়ে নিয়েছে, তৃষ্ণার কষ্ট বরদাশত করেছে, বেত্রাঘাতের ফয়সালা নেমে নিয়েছে। তবু ফেরাউনের আবদার মানেনি। মানতে পারেনি।

সবশেষে এল এক কঠিন নির্দেশ। ফেরাউন বলল-ওকে শূলিতে চড়াও।

পৃথিবীর ইতিহাসে শূলির আবিস্কারক হলো, ফিরাউন। ফাঁসির প্রথাও সে-ই চালু করেছে।

শূলি দেওয়ার নিয়ম হলো-দুই হাত দুদিকে প্রসারিত করে দুই হাতের তালু কাঠের উপর বিছিয়ে তাতে পেরেক মারা হয়। অনুরূপভাবে পেরেক মারা হয় দুই পায়েও। অতঃপর সেই কাঠ ব্যক্তিসহ দাঁড় করানো হয়। তখন সেই ব্যক্তি অসীম যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়ে কাতরাতে কাতরাতে সেখানেই প্রাণ ত্যাগ করে।

ফেরাউনের নির্দেশে আসিয়াকে শূলিতে চড়ানোর প্রস্তুতি শুরু হলো। তুলতুলে নরম হাত-যে হাত কোনোদিন শক্ত তৃণ পর্যন্ত স্পর্শ করেনি, সেই রেশম কোমল হাতে মারা হলো-লোহার পেরেক! যে পা কোনোদিন শক্তভূমি মাড়ায়নি– সে পায়েও ঢুকানো হলো–লৌহ পেরেক। শুধু কি তাই? না, শুধু এতটুকু কষ্ট দিয়েই পাষণ্ড ফেরাআউন ক্ষ্যান্ত হয়নি। সে পুনরায় নির্দেশ দিল-ওর দেহ থেকে চামড়া আলাদা করে নাও। অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দাও। সঙ্গে সঙ্গে সেই নির্দেশও পালন শুরু হলো।

প্রিয় পাঠক! সেই নির্মম দৃশ্যটা একটু চিন্তা করে দেখুন তো! আহ! কত করুণ, কত নির্মম সেই দৃশ্য!! কত নিষ্ঠুর সেই অত্যাচারী ফেরআউন!

ঈমান আঘাত পেলে জ্বলে ওঠে। তাই ভয়ানক এই বিপদ মুহুর্তেও আসিয়ার ঈমান বিন্দু বরাবর হ্রাস পেল না। বরং জ্বলে ওঠল স্ফুলিংগের মতো। বাড়তে লাগতে পাল্লা দিয়ে।

এই কঠিন অবস্থায় আসিয়া আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া করল। তার সে দোয়ায় সেদিন আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে ওঠেছিল। আসিয়ার এই দোয়াকে আল্লাহ তাআলা এমনভাবে কবুল করেছিলেন পরবর্তীতে সেটাকে পবিত্র কুরআনের অংশ বানিয়ে দিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত এই উম্মত কুরআন তিলাওয়াত করবে। তিলাওয়াত করবে হযরত আসিয়ার দোয়া। স্মরণ করবে তাঁর হৃদয়বিদারক কাহিনী। আসিয়ার দোয়াটি কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে এভাবে–

“আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদের জন্য ফেরআউন পত্নির দৃষ্টান্ত দিয়েছেন।

(হে নবী! স্মরণ করুন) যখন সে প্রার্থনা করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! তোমার সান্নিধ্যে আমার জন্যে বেহেশতে একটি ঘর নির্মাণ করো। আর আমাকে মুক্তি দাও ফেরাআউন ও তাঁর দুস্কর্ম থেকে। সেই সাথে নিস্কৃতি দাও জালেম সম্প্রদায় থেকেও।” [সূরা তাহরীমঃ ১১]

এই দোয়ার সাথে সাথে আল্লাহ পাক রিদওয়ান ফিরিশতাকে বললেন, আসিয়ার চোখের সামনের পর্দা সরিয়ে দাও। অদৃশ্যকে করে দাও দৃশ্যমান। দেখিয়ে দাও তাকে বেহেশতের সেই ঘর-যেখানে সে চিরকাল থাকবে।

নির্দেশ পালিত হলো সঙ্গে সঙ্গে। তখন শূলিতে ঝুলতে ঝুলতে আসিয়া প্রত্যক্ষ করছিল বেহেশতে নির্মিত তাঁর বসবাসের ঘর। বেহেশতের ঘর প্রত্যক্ষ করতেই আল্লাহ তাআলার নির্দেশের ফেরেশতা তাঁর রূহ কবজ করে নেয়। তাঁর দ্বিতীয় দোয়াও কবুল হয়। মুক্তি পায় সে ফিরআউন ও তাঁর অত্যাচার থেকে। মুক্তি পায় অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।

প্রিয় পাঠক! এই হলো ফেরাউনের স্ত্রী ও তার দাসীর মর্মস্পর্শী কাহিনী। আমি এই কাহিনী এজন্যই বর্ণনা করিনি যে, এটা পাঠ করে আপনারা শুধু ব্যথিত হবেন। চোখের পানি ফেলবেন। বরং আমি তো এই কাহিনী এজন্যে বর্ণনা করেছি যে, আপনারা ইহা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন। কী শিক্ষা গ্রহণ করবেন? হ্যাঁ, এই ঘটনা থেকে আমরা এই শিক্ষা গ্রহণ করব যে, যত কষ্ট-মসীবত আর বিপদ-আপদই আসুক না কেন, কোনো অবস্থাতেই আমরা ঈমান ছাড়ব না। তাঁর হুকুম আহকাম মেনে চলব। প্রয়োজনে তাঁর জন্য নিজের জীবন এমনকি প্রাণপ্রিয় সন্তানদের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে কুণ্ঠিত হব না। হে আরশের অধিপতি মহান মাওলা! তুমি আমাদের তাওফীক দাও। দান করো ফেরাউনের স্ত্রী ও তাঁর দাসীর মতো মজবুত ঈমান!! [সূত্রঃ বেহনূঁ ছে খেতাব]  

এরপর পড়ুন >> নূর বিবির নূরানী কর্ম

লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম (আদর্শ স্বামী স্ত্রী ১) বই থেকে)

প্রিয় পাঠক পাঠিকা, ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া ও তার দাসীর হৃদয়স্পর্শী কাহিনী আপনার বন্ধুদেরকে পড়াতে এটি শেয়ার করুন। 

Image by Pixabay

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

3 thoughts on “দুই রমনীর হৃদয়স্পর্শী কাহিনী (ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া ঘটনা)”

  1. I got this web page from my buddy who told me regarding this web site and at the moment this time I am browsing this site and reading very informative content at this place.

    Reply

Leave a Comment