নবী-রাসূলদের পর সমগ্র মানব জাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানব হলেন মুসলিম বিশ্বের প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)। উম্মতের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম বেহেশতে প্রবেশ করবেন। তিনি এমন এক সৌভাগ্যবান ব্যক্তি যাকে বেহেশতের প্রতিটি দরজা আহবান করবে। নিম্নে তাঁরই একটি ছোট্ট ঘটনা সম্মানিত পাঠক পাঠিকাদের সম্মুখে আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ ।
একেই বলে তাকওয়া (আবু বকর (রাঃ) এর ইসলামিক গল্প)
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) এর একটি গোলাম ছিল । সে প্রতিদিন বিভিন্ন কাজকর্ম করে কিছু পয়সা উপার্জন করতো। আর এ থেকে একটা নির্ধারিত অংশ প্রদান করতো হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা.) কে । গোলামটির মুক্ত হওয়ার এটি একটি শর্ত ছিল ।
প্রতিদিনের মতো গোলামটি আজো কাজে বেরিয়েছে। বিভিন্ন জনের সাথে সাক্ষাত করে কাজ চেয়েছে। কিন্তু কেউ তাকে কাজ দেয়নি। ফলে মনটা আজ খুবই খারাপ। সে চিন্তা করছে আজকে সে মনীবের কাছে কি জমা দিবে? এভাবে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ সে এক গোত্রের কাছে এসে পড়লো। দেখলো, সেখানে বিশাল আয়োজন ৷ বহু লোকের সমাগম। কিন্তু কেন, কি উদ্দেশ্যে এত বড় আয়োজন তা সে বুঝতে পারলো না। সে ধীরে ধীরে সামনে এগুলো। লোকদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো, আজকে এ বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। মেহমানদের জন্য প্রচুর খাবার রান্না করা হয়েছে। এ এক এলাহী কান্ড !
এ বাড়িতে বিয়ে- এতে তার কি আসে যায়? তার প্রয়োজন একটি কাজের । প্রয়োজন কিছু অর্থ-কড়ির। কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো এখন পর্যন্ত মামুলি কোনো আয়-উপার্জনের ব্যবস্থাও তার হলো না। তাই সে ভীষণ চিন্তিত, দারুণ হতাশাগ্রস্থ।
বিষন্ন মন নিয়ে গোলাম ফিরে চললো। মনে মনে বলল, নাহ্ আজ কোনো কাজ পাবো না। ফিরে গিয়ে মনিবকে বুঝিয়ে বলব, অনেক চেষ্টা করেছি। কোনো কাজ পাইনি । তাই খালি হাতে ফিরে এসেছি।
এসব ভাবতে ভাবতে সে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল। এমন সময় এক লোকের সাথে তার দেখা। লোকটিকে আগে দেখেছে বলে মনে হলো। লোকটি বলল, আমাকে হয়ত ঠিক ভাবে চিনতে পারছো না। শুনো, তুমি বহুদিন পূর্বে বিরাট একটি উপকার করেছিলে আমার। আমি ভীষণ অসুস্থ ছিলাম। আমাকে তুমি মন্ত্র পড়ে ফুঁক দিয়ে সারিয়ে তুলেছিলে। তখন আমি খুশি হয়ে তোমাকে কিছু দেওয়ার ওয়াদা করেছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত তোমাকে না পেয়ে সেই ওয়াদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। আজ আমাদের বাড়িতে বিবাহের অনুষ্ঠান। খাবার দাবারের বিশাল আয়োজন। সূতরাং আজকে যখন এসেছো তখন কিছু খাবার নিয়ে যাও।
গোলামটি না করল না। সে বেশ কিছু খাবার নিয়ে মনিবের বাড়িতে গেল। তারপর ঐ খাবারগুলো হযরত আবু বকর (রা.) এর সামনে রাখলো ।
হযরত আবু বকর (রা.) ভীষণ ক্ষুধার্ত ছিলেন। তিনি খাবার দেখে কিছু জিজ্ঞেস না করেই উহা থেকে এক গ্রাস খেয়ে ফেললেন ।
এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে গোলাম কিছুটা অবাক হলো । ভাবলো, ব্যাপার কি? প্রতিদিন তিনি আমাকে আয়-উপার্জনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু আজ এই খাবার কোত্থেকে কিভাবে আনলাম- তা জিজ্ঞেস না করেই খেতে শুরু করলেন ।
এতক্ষণে লোকমাটি হযরত আবু বকর (রা.) এর পেটে চলে গেছে । গোলাম বিলম্ব না করে তার মনে জেগে উঠা প্রশ্নটি মনিবকে করে বসল । সে বলল- হুজুর! এই খাবার কিভাবে, কোত্থেকে এনেছি তা না জেনেই খেতে শুরু করলেন?
হযরত আবু বকর (রা.) বললেন- ক্ষুধার তাড়নায় জিজ্ঞেস করার সময় পেলাম না। এবার বলো, কিভাবে এ খাবার পেয়েছো ।
জবাবে গোলাম সবকিছু খুলে বলল। এতে হযরত আবু বকর (রা.) এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। বললেন- তুমি তো আমাকে ধ্বংস করে দিলে ।
এ বলে তিনি গলার ভিতর হাত দিয়ে বমি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাওয়া একটি মাত্র গ্রাস সহজে কি বের হয়?
পাশেই কয়েকজন লোক ছিল। তাদের একজন আবু বকর (রা.) কে বলল, জনাব! পানি পান করুন। এতে হয়ত বমি হতে পারে ।
একটি পেয়ালায় করে পানি আনা হলো। তিনি দ্রুত পান করলেন । তারপর আবার বমি করার চেষ্টা করলেন। ফলে এক সময় বমি হলো। পানির সাথে সদ্য আহারকৃত লোকমাটি বেরিয়ে এলো। তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ।
উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন বলল, আল্লাহপাক আপনার উপর রহম করুন। আপনি এক লোকমা খাবারের জন্য এত কষ্ট স্বীকার করলেন?
আবু বকর (রা.) উত্তরে বললেন- যদি এই গ্রাস বের করতে আমার জানও বের হয়ে যেতো তবু আমি উহা বের করতাম। কেননা আমি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখে শুনেছি- হারাম খাদ্য দ্বারা গঠিত দেহের জন্য দোজখের আগুনই বেশি উপযোগী। আমার ভয় হলো, না জানি এই খাবার দ্বারা আমার দেহের কোনো অংশ তৈরি হয়ে যায় ।
প্রিয় পাঠক! গোলামের মাল খাওয়া মনিবের জন্য জায়েজ ছিল । কিন্তু এতদসত্তেও হযরত আবু বকর (রা.) সতর্কতার খাতিরে সন্দেহ জনক মাল গ্রহণ করতে মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে একেই বলে তাকওয়া, এরই নাম পরহেযগারী । আল্লাহ তা’আলা লেখক- পাঠক তথা সমস্ত মুসলমান ভাই বোনকে প্রকৃত পরহেযগারী অবলম্বন করার তাওফীক দিন । আমীন।
লেখক: মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। গল্পের উৎস: যে গল্পে হৃদয় কাঁদে – হৃদয় গলে সিরিজ ১০।
আরও জানুন: ইসলামের শ্রেষ্ঠ ও জান্নাতি সাহাবীদের নাম অর্থসহ
Please follow our Facebook, Twitter, Instagram, Linkedin, Pinterest, Tumblr, And Youtube channels for more updates.