আসমানী সাহায্য, কিশোর কিশোরীদের জন্য রচিত মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলামের ইসলামিক গল্প।
আসমানী সাহায্য! (কিশোর কিশোরীদের গল্প ২)
প্রিয় বন্ধুরা! আমরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের-এর উম্মত। তিনি হলেন সমগ্র মানবজাতির সর্বোত্তম আদর্শ।
তার আদেশ-নিষেধ মেনে চললে এবং তার পবিত্র জীবন অনুসরণ করলে আমরা হতে পারব মহান আল্লাহর ভালোবাসার বান্দা। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা, কাজ ও অনুমোদন বা মৌন সমর্থনকে হাদীস বলে। বন্ধুরা! তোমরা কি কখনো চিন্তা করেছ যে, আজ এত শত বছর পরেও নবীজীর পবিত্র বাণীসমূহ অক্ষতভাবে কীভাবে আমাদের কাছে পৌঁছাল?
হ্যাঁ বন্ধুরা, এর পেছনে রয়েছে এমন সব মহামানবের অতুলনীয় আত্মত্যাগ, যাদের জীবন কাহিনী শুনলে তোমাদের মনেও সাধ জাগবে তাদের মত হওয়ার। তারা হলেন আমাদের মহান মুহাদ্দিসবৃন্দ। তারা যেমন ছিলেন ইলমের জন্য পাগলপারা, তেমনি ছিলেন খাঁটি আল্লাহওয়ালা।
তোমাদের একটা ঘটনা শোনাই। মিসরের কথা। তখন হিজরী তৃতীয় শতাব্দী। মুহাম্মদ ইবনে জারীর রহঃ, মুহাম্মদ ইবনে খুযায়মা রহঃ, মুহাম্মদ ইবনে নাসর রহঃ, ও মুহাম্মদ ইবনে হারুন রহঃ-এর চার বন্ধু মিসরে হাদীস সংগ্রহ করতে এসেছেন। চারজনের নামই মুহাম্মদ এবং চারজনই পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস হয়েছেন। তারা বড় বড় মুহাদ্দিসের নিকট যান এবং তাদের থেকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস সংগ্রহ করেন। দিন রাত তাদের এই এক সাধনা। অন্য কোনো দিকে নজর দেওয়ার ফুরসত তাদের নেই। এভাবে কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তাদের টাকা পয়সা ফুরিয়ে যায়। এরপর অর্ধাহারে এবং এক পর্যায়ে অনাহারে তাদের দিন কাটতে থাকে। কিন্তু জ্ঞান সাধনায় তাদের কোনো বিরাম নেই। এভাবে কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর অবস্থা এমন হলো যে, তাঁদের এখন জান বাঁচানোই দায়!
এহেন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে একরাতে চার বন্ধু মিলে পরামর্শ করলেন, কী করা যায়? সিদ্ধান্ত হলো, তাদের অবস্থা মানুষকে জানাতে হবে । কিন্তু কে করবেন এই কাজ! এ যে বড় কঠিন কাজ, রুচিতে বাধে!!
অবশেষে লটারি হলো। লটারিতে নাম এল মুহাম্মদ ইবনে খুযায়মা রহঃ-এর। তিনি তখন কি করলেন জানো? হ্যাঁ, তিনি মানুষের কাছে হাত না পেতে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সকল মাখলুকাতের রিযিকদাতা আল্লাহ পাকের দরবারে প্রার্থনা জানাতে লাগলেন।
পরের রাত। খট খট খট। দরজায় করাঘাতের শব্দ।
কী ব্যাপার? তাঁরা দরজা খুলে দেখেন বাতি হাতে এক লোক দাঁড়ানো। লোকটি জিজ্ঞেস করল, আপনাদের মধ্যে মুহাম্মদ ইবনে নাসর কে?
বন্ধুরা দেখিয়ে দিলেন।
দ্বিতীয়বার সে জিজ্ঞেস করল, আপনাদের মধ্যে মুহাম্মদ ইবনে জারির কে?
অপর বন্ধুরা তাঁকে দেখিয়ে দিলেন। তাঁকেও পঞ্চাশটি স্বর্ণমুদ্রার একটি থলে দেওয়া হলো।
তৃতীয়বার সে জিজ্ঞেস করল, মুহাম্মদ ইবনে হারুন কে?
দেখিয়ে দেওয়া হলে তাকেও পঞ্চাশটি স্বর্ণমুদ্রার একটি থলে দেওয়া হলো।
চতুর্থবার সে জিজ্ঞেস করল, মুহাম্মদ ইবনে খুযায়মা কে?
বলা হলো, যিনি নামাজ পড়ছেন তিনিই হলেন মুহাম্মদ ইবনে খুযায়মা। লোকটি তাঁকেও পঞ্চাশটি স্বর্ণ মুদ্রার একটি থলে উপহার দিলেন।
এরপর সে বলল, আমি মিসরের আমীরের পক্ষ থেকে এসেছি। তিনি গতরাতে স্বপ্নে দেখেছেন যে, আপনারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় আছেন। তাই তিনি আপনাদের জন্য এই উপহার পাঠিয়েছেন। এই অর্থ আপনাদের প্রয়োজনে ব্যয় করুন এবং তিনি অত্যন্ত তাগিদের সাথে অনুরোধ করেছেন, এই অর্থ শেষ হলে আপনারা অবশ্যই তাঁকে জানাবেন। একথা বলে লোকটি চলে গেল।
প্রিয় বন্ধুরা, দেখলে তো! যারা আল্লাহর কাজ করে এবং কেবল আল্লাহর কাছেই চায়, আল্লাহ পাক কীভাবে তাদের সাহায্য করেন। আসল কথা হলো, যে আল্লাহর হয়ে যায় আল্লাহও তার হয়ে যান। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে তার মনোনীত বান্দা হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
[সূত্রঃ তারীখে বাগদাদ, খন্ডঃ ২, পৃষ্ঠাঃ ১৬৪-১৬৫]
লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম।
এরপর পড়ুন : সৎ মায়ের আদর যত্ন (কিশোর গল্প ৩)
উৎস : আদর্শ কিশোর কিশোরী ৩ বই থেকে।
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.