কিশোর কিশোরীদের জন্য গল্পঃ অহঙ্কার থেকে সাবধান!
সামিয়া নামের এক মেয়ে। পবিত্র কুরআনের হাফেযা। দশ বছর বয়সেই সে হেফয শেষ করেছে। তবে সে ছিল খুব ভীতু প্রকৃতির মেয়ে। বিশেষ করে পরীক্ষা দেওয়াকে সে খুব বেশী ভয় পেত। কিন্তু একটি আমলের বদৌলতে তার সেই ভয় কেটে যায়। বন্ধুরো! কী ছিল তার সেই আমল? কীভাবে চলে গিয়েছিল তার ভয়-ভীতি? শুনবে? তাহলে সামিয়ার মুখ থেকেই শোনো-
যেদিন কেন্দ্রীয় বোর্ডের পরীক্ষা, সেদিন আমি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে দোয়া করি। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার পর অন্তর এতটাই প্রশান্ত হয়ে যায় যা আমি ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না। পরীক্ষা শুরু হলে দেখা গেল, সিরিয়ালের প্রথম নামটি আমারই। কিন্তু তখন ভয়ের পরিবর্তে আমি ছিলাম অত্যন্ত প্রশান্ত। পরীক্ষক সাহেবা আমাকে যা কিছু এবং যেখান যেখানে থেকে জিজ্ঞেস করলেন তৎক্ষণাৎ আমি সুন্দর করে উত্তর দিয়ে দিলাম। কোথাও আমার কোনো ভুল হলো না।
ফলাফলে দেখা গেল আমি পূর্ণ ১০০ নম্বর পেয়েছি। যেহেতু ছয় বছর বয়স থেকে আমি পবিত্র কুরআন হেফয শুরু করেছিলাম সেজন্য বাসায় প্রাইভেটভাবে স্কুলের পড়াশোনা চালিয়ে যাই। যখন নবম শ্রেণীতে আমার স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় হলো অষ্টম শ্রেণীতে বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত সনদ দেখিয়ে ভর্তি করার নিয়ম চালু হলো। বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দেওয়ার কোনো প্রস্তুতি আমার ছিল না। আম্মা আমাকে বললেন, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ো এবং নিজের সহজ সাফল্যের জন্য দোয়া করো।’
তোমরা বিশ্বাস করো, আমি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে পরীক্ষা দিতে যেতাম এবং প্রশ্নপত্রে সেটাই আসত, যা আমার মুখস্থ থাকত। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ফলাফল প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে পরীক্ষার ভালো ফলাফলের জন্য দোয়া করে যেতে লাগলাম। ফলাফল প্রকাশের দিনও অনেক দোয়া করলাম। ফলাফল যখন প্রকাশ হলো আনন্দে আমি আটখানা হয়ে হয়ে গেলাম। বিশ্বাসই হচ্ছিল না, এত ভালো ফলাফল আমার হতে পারে। আমি আমার মহল্লা ও থানার মাঝে সবচেয়ে ভালো ফলাফলের অধিকারী হলাম এবং বৃত্তি পেলাম। সবাই আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে গেল। তারা বলাবলি করতে লাগল, এই মেয়েটা বড় ভালো! নিয়মিত সে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং তার ওপর আল্লাহর রহমতও রয়েছে।’
সেদিনের পর থেকে আমার মাঝে ধীরে ধীরে অহঙ্কার দানা বেঁধে উঠে। নামাজ পড়া ও দোয়া করার প্রতিও সেই আগ্রহ আর আমার মাঝে থাকল না, যা আগে ছিল। তাহাজ্জুদের নামাজ কখনো শুধু এজন্য পড়তাম যেন লোকদের মধ্যে আমার প্রশংসা চালু থাকে এবং আমার প্রতি আল্লাহর খাছ রহমত রয়েছে—এটা বলাবলি হতে থাকে।
এরপর থেকে আমার মেধা ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। ক্লাসে নানা সমস্যায় পড়তে থাকি। যে পড়াটা বাসায় ভালোভাবে মুখস্থ করে যেতাম স্কুলে গিয়ে শোনানোর সময় কিংবা লেখার সময় সেটাও ভুলে যেতাম। শিক্ষিকাগণও আমাকে আর ভালো চোখে দেখতেন না।
একবার ক্লাস শিক্ষিকা ছাত্রীদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে দিচ্ছিলেন। দলনেতার মাঝে এক ছাত্রী ছিল হাফেযা। যখন শিক্ষিকা বললেন, হাফেযা ছাত্রীর দলে কে যেতে চাও? তখন আমি হাত উঠালাম। হাফেযা ওই ছাত্রীটি তখন মুখ ঘুরিয়ে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলল, আমি তাকে আমাদের দলে নিতে চাই না।
আসলে অযোগ্য ভেবে কেউ আর আমাকে তাদের দলে নিতে চাচ্ছিল না। তখন শিক্ষিকা আমার প্রতি কিছুটা বিদ্রূপ করেই তাকে বললেন, সমস্যা নেই, তোমার দলে তাকে নিয়ে যাও। সওয়াব হবে!
কথায় বলা হয়, কথার আঘাত তীরের জখমের চেয়েও মারাত্মক হয়ে থাকে, সরাসরি যা অন্তরে গিয়ে বিঁধে। আমার শিক্ষিকার এই কথাটিও আমার অন্তরে গিয়ে বিঁধেছিল। কিন্তু এটা ছিল আমার অহঙ্কারেরই পরিণতি। নবম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষাতেও আমার ফলাফল অনেক খারাপ হলো।
তাই আমি সব কিশোর-কিশোরীর কাছে অনুরোধ করব-কখনো অহঙ্কার করবে না। অহঙ্কার এমন একটি রোগ, যা সব কিছু ধ্বংস করে মানুষকে অন্তঃসারশূন্য করে ফেলে। তোমরা আমার জন্য দোয়া করো, আল্লাহ তাআলা যেন আমাকে খালেস নিয়তে ক্ষমা করে দেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু। তিনি যেন আমাকে খালেস নিয়তে একমাত্র তারেই সন্তুষ্টির জন্য তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার তাওফীক দেন এবং নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করার ও তার উপর আমল করারও তাওফীক নসীব করেন। আমীন।
[সূত্রঃ বাচ্চুঁ কা ইসলাম]
গল্পের উৎস : আদর্শ কিশোর কিশোরী ৩ বই থেকে।
লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম।
এরপর পড়ুন : আসমানী সাহায্য
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.