বনি ইসরাইলের এক মহিলা।
হযরত মূসা (আঃ) বললেন, তুমি এমন কি পাপ কাজ করেছ যার কারণে তুমি এত ভীত হয়ে পড়েছ?
মহিলা উত্তরে বলল, আমার পাপ বড় সাংঘাতিক ধরণের পাপ। কারণ আমি কেবল ব্যভিচার করেই ক্ষান্ত হই নি, এর ফলে যে সন্তান জন্ম নিয়েছিল তাকেও আমি নিজ হাতে গলা টিপে হত্যা করেছি। তাই আমি ঐ পাপের দরুণ অস্থির হয়ে পড়েছি।
মহিলার কথা শুনামাত্র হযরত মূসা (আঃ) এর চেহারা ক্রোধে রক্ত বর্ণ ধারণ করল। মুখমণ্ডলে গভীর উদ্বিগ্নতা ফুটে উঠল। উজ্জ্বল দীপ্ত চোখ দুটোতে যেন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। শিরায় শিরায় তখন উঞ্চ রক্তের প্রবাহ। দক্ষিন হস্ত মুষ্টিবদ্ধ হয় তাঁর। তারপর দাঁতে দাঁত পিষে বললেন, দূর হও এখান থেকে। তোমার পাপে কি আমরাও ধ্বংস হবো?
হযরত মূসা (আঃ) এর রাগের মাত্রা বুঝতে পেরে মহিলা তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে চলে গেল। সে এখনো তাঁর বাড়িতে পৌঁছতে পারেনি, ঠিক এমন সময় হযরত জিবরাইল (আঃ) ওহী নিয়ে হযরত মূসা (আঃ) এর নিকট আগমন করলেন। বললেন—
ওগো আল্লাহর নবী! আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাকে প্রশ্ন করেছেন যে, ঐ মহিলার চেয়েও বড় পাপী এবং তাঁর কাজের চেয়েও নিকৃষ্ট কাজ জগতে আছে কি?
মূসা (আঃ) জবাবে বললেন, ঐ মহিলার চেয়ে বড় গোনাহগার এবং তাঁর কর্মের চেয়ে মন্দ কর্ম আর কি হতে পারে?
জিবরাইল (আঃ) বললেন, হ্যাঁ, ঐ মহিলার চেয়ে খারাপ এবং তাঁর কাজের চেয়েও নিকৃষ্ট কাজ আছে। শুনে রাখুন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়, সে ঐ যেনাকার এবং অন্যায়ভাবে সন্তান হত্যাকারিণী মহিলার চেয়েও নিকৃষ্ট।
প্রিয় মুমিন মুসলমান ভাই ও বোনেরা! হযরত মূসা (আঃ) এর জমানায় মাত্র দু’ওয়াক্ত নামাজ ফরজ ছিল। সেই দু’ওয়াক্ত নামাজ তরককারী ব্যক্তি যদি একজন বদকার ও আপন সন্তান হত্যাকারী মহিলার চেয়ে নিকৃষ্ট হয়, তবে আমাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও আমরা যদি তা পরিত্যাগ করি, তাহলে আমরা কত জঘন্য ও নিকৃষ্ট তা সহজেই অনুমান করা যায়।
আজকাল দেখা যায়, যদি কোন মেয়ে লোক জিনা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তবে তাঁর স্বামী চরম অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে তালাক পর্যন্ত দিয়ে দেন। কিন্তু বহু মুসলমান এমনও রয়েছেন যাদের স্ত্রীরা আদৌ নামাজ পড়ে না, অথচ এজন্য তাদের মনে মোটেও আফসোস নেই। তারা এ বিষয়টিকে অতি সহজভাবে মেনে নেয়। তারা মনে করে নামাজ না পড়লে তেমন কি আর এসে যায়। নাউযুবিল্লাহ।
প্রিয় ভাইগণ! এর একমাত্র কারণ এই যে, আমরা আমাদের হককে আল্লাহর হকের চেয়ে বড় মনে করি। মনে রাখবেন, বেনামাযী স্ত্রী যেনাকারী স্ত্রীর চেয়ে কোন অংশেই কম জঘন্য নয়। বারবার বুঝানো সমঝানো এবং আন্তরিক চেষ্টা চালানোর পরও যদি সে নামাজ পড়তে শুরু না করে তবে এরূপ স্ত্রীকে পরিত্যাগ করাও সওয়াবের কাজ। তবে একথাও ঠিক যে, বেনামাযী স্ত্রীকে পরিত্যাগ না করে যদি তাকে সাথে নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় (মাসতুরাত জামাতে) বের হয়ে নামাযী বানানো যায়, তাহলে নিঃসন্দেহে স্বামী আরও বেশি সওয়াবের অধিকারী হবেন।
তাই আসুন আমরা নিজেরাও নামাজ পড়ি। সাথে সাথে নিজের স্ত্রী পুত্রসহ এলাকার সর্বস্তরের মুসলমানদেরকে নামাজী বানানোর চেষ্টা করি। শেষ রাত্রে উঠে রুনাযারীও করি। হে অনন্ত অসীম দয়ালু প্রভূ! তুমি আমাদের তাওফিক দাও। আমীন। ছুম্মা আমিন।
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম।
উৎসঃ হৃদয়স্পর্শী শিক্ষণীয় কাহিনী (হৃদয় গলে সিরিজ-১২) বই থেকে সংগ্রহ।
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আশা করি হৃদয় গলে সিরিজের “সবচেয়ে বড় পাপ” গল্পটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে এবং এটি আপনার বন্ধুদেরকে পড়াতে শেয়ার করবেন।
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.