ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার বাংলাদেশ

“ডিজিটাল মার্কেটিং” বা “ডিজিটাল মার্কেটার”, এই শব্দগুলো শোনার সাথে সাথে সবার আগে মাথায় চোখের সামনে কি ভাসে?

কম্পিউটারের সামনে কেউ বসে বসে কেউ ই-কমার্স সাইট চালাচ্ছে, এমন কিছু?

ডিজিটাল মার্কেটিং এর শুরুটা হয়তো সেরকমভাবেই হয়েছিলো– অনলাইনে জিনিস কেনাবেচার মাধ্যমে।

তবে এখন তা শাখাপ্রশাখা ছড়াতে ছড়াতে অনেক বেশি বিস্তৃতি লাভ করে ফেলেছে।

ছোটবড় সবার মধ্যেই ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই।

এর মধ্যে অন্যতম একটি প্রশ্ন হলো – বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার কেমন, অথবা এর ভবিষ্যত কি? 

এখন তাহলে সেই বিষয়েই একটু বিস্তর আলোচনা করা যাক।

ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার বাংলাদেশ
ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার বাংলাদেশ

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ইতিহাস

 

আজকাল যেকোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করার সময় একটা কথা কমবেশি সবার মুখেই শোনা যায়, “উফ! এত্তো অ্যাড আসে কেন?”

 

এইসব অ্যাডভারটাইজিং কনটেন্ট বা অ্যাড আমরা ছোটবেলা থেকে সবচেয়ে বেশি দেখে এসেছি টিভিতে।

চ্যানেলের অনুষ্ঠান, সিনেমা, নাটক, কার্টুন – যেকোনো সম্প্রচারের মাঝখানের বিজ্ঞাপন বিরতির মাঝে ছোটখাটো বাথরুম ব্রেক নেওয়া, বা চট করে গিয়ে নাস্তা নিয়ে আসা, এধরণের স্মৃতি আমাদের সবারই আছে।

তবে এখন এই অ্যাড বা বিজ্ঞাপনগুলো শুধু টিভির পর্দায় সীমাবদ্ধ থাকছে না।

আমরা এখন দীর্ঘ সময় দেয়ালের টিভিতে না তাকিয়ে হাতের স্মার্টফোনের দিকে তাকিয়ে থাকি।

এজন্য অ্যাডভারটাইজগুলোও এখন স্মার্টফোনে সরে আসছে, যেখানে দর্শক সংখ্যা বেশি।

 

ইউটিউবে ভিডিওর মাঝে, ফেসবুকের নিউজফিডে, গুগলে অথবা ওয়েবসাইটগুলোর কোণায় কোণায়– এইসব জায়াগায়ই আমরা অ্যাডস এর দেখা পাই।

বর্তমান সময়ে প্রত্যেকটা কোম্পানির উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাদের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস সম্পর্কে মানুষকে যেকোনো মূল্যে অবগত করা।

 

আর অ্যাডভারটাইজিং এর এই অত্যাধুনিক পন্থাগুলোই মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং

একজন ডিজিটাল মার্কেটারের কাজ হলো সবচেয়ে ফলপ্রসূ উপায়ে প্রোডাক্ট ও সার্ভিস এর ব্যাপারে মানুষকে জানানো।

আর এই কাজে সফল হওয়ার জন্য তাকে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, অনলাইন জগতটাকে বুঝতে হবে।

 

ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকারের হতে পারে?

 

আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার নিয়ে জানতে চান এবং একজন Digital Marketer হতে চান, তাহলে সবার আগে এই মৌলিক বিষয়গুলো বিশেষ করে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

আগেই বলেছি, ডিজিটাল মার্কেটিং এর সূচনা হয়তো খুবই সাধারণভাবে হয়েছিলো। তবে এখন তা শাখাপ্রশাখা ছড়িয়ে বেশ বিস্তর হয়ে পড়েছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং মানে শুধুমাত্র একটি বিষয় নিয়ে দক্ষতা অর্জন নয়। আপনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রচারণা, তবে সেটা বিভিন্ন উপায়ে হতে পারে। এখানে কিছু প্রকারভেদ এবং তাদের বর্ণনা দেখে ভালো করে ধারণা নিতে পারেনঃ

  • Google Ads

 

আপনি যেকোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সবার আগে কি করেন? 

প্রায় সবারই হয়তো একই উত্তর হবে – গুগল করেন। 

সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন গুগল ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম একটা মাধ্যম। 

আপনি যখনই কোন বিষয় নিয়ে গুগলের কাছে জানতে চান, তখন আপনি গুগলকে নিজের আগ্রহের বিষয় নিয়ে একটা আইডিয়া দিচ্ছেন।

আর এই আইডিয়াটাকে কাজে লাগিয়েই Google Ads পারসোনালাইজড অ্যাড কনটেন্ট প্রমোট করে থাকে। ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে Google Ads এই টপিক বেছে নিয়ে এই বিষয়ে খুব ভাল দক্ষতা অর্জন করে শুরু করতে পারেন আপনার ক্যারিয়ার।

 

  • সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং

 

এখনকার সময়ে ব্র্যান্ড প্রমোশনের জন্য কোম্পানিগুলোর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে সোশাল মিডিয়া। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, পিন্টারেস্ট – এমন অসংখ্য সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম আজকাল অ্যাড চালানোর উৎকৃষ্ট স্থান। একজন ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে এধরণের প্ল্যাটফর্মের আদ্যপান্ত জেনে হয়ে উঠতে পারেন একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এক্সপার্ট।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

 

অনলাইনে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ঘাঁটতে গিয়ে এই টার্মটা হয়তো দেখেছেন।

Affiliate Marketing এর সাহায্যে যে এই কাজ করে সে কিছুটা কমিশনের উপর নির্ভর করে আয় করে থাকে।

প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের মার্কেটিং এর পাশাপাশি এই কমিশনভিত্তিক কাজকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে।

এর উপরে বিস্তারিত জানতে চাইলে আপনি কোর্স করতে পারেন, টিউটোরিয়াল দেখতে পারেন।

কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও অ্যাফিলিয়েট দিয়ে অনেক সফলতার সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার গড়ে তোলা যায়।

  • SEO

বেশ সুপরিচিত এই টার্মটার মানে হলো Search Engine Optimization। কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের জন্য তৈরি করা বিজ্ঞাপন অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে কিভাবে পৌঁছানো যায়, মূলত তার উপর ফোকাস করাই হচ্ছে SEO – এর কাজ।

একটা কনটেন্টকে কিভাবে মোডিফাই করলে তা মানুষের সামনে আসবে, সেটা নিশ্চিত করে SEO। যেকোনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রেই SEO এর ব্যবহার দেখা যেতে পারে – গুগল সার্চ ইঞ্জিন, সোশাল মিডিয়া, ইউটিউব, ইত্যাদি।

 

কারা ডিজিটাল মার্কেটার হতে পারবে?

 

এখন আপনার মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে যে, “ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে আমাকে কি করতে হবে?”

ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য আপনাকে বিশেষ কোন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করতে হবে না। শেখার আগ্রহ আর ধৈর্য থাকলে যে কেউ digital marketer হতে পারবে।

আপনি সাইন্স, কমার্স, আর্টস – যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে জ্ঞানলাভ করতে পারবেন।

তবে কিছু জিনিস আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবে।

ইংরেজিতে মোটামুটি পারদর্শীতা আর বেসিক কম্পিউটার স্কিলস থাকলে ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে যাত্রায় আপনি একধাপ এগিয়ে থাকবেন।

তবে সেরকম জ্ঞান না থাকলেও ভয়ের কিছু নেই, শুধু আরেকটু বেশি কষ্ট করতে হবে।

কারণ সেক্ষেত্রে আপনাকে একদম জিরো থেকে শুরু করতে হবে।

 

কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা যায়?  

 

ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার একাধিক রাস্তা আছে।

আপনি চাইলে নিজেকে এই বিষয়ে দক্ষ করে তুলতে পারেন, অথবা দ্বিতীয় কোন পক্ষের সাহায্য নিতে পারেন।

নিজে শেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে বিপুল পরিমাণে সময় আর শ্রম দিতে হবে।

ঘন্টার পর ঘন্টা কম্পিউটারের সামনে বসে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ফিল্ড নিয়ে আগাগোড়া সবকিছু জানতে হবে, বুঝতে হবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং-ই আপনার সহায় হবে।

যখন আপনি এই বিষয়ে জানার জন্য অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করবেন, ইউটিউবে ভিডিও দেখবেন, তখন আপনার সামনে সাজেশন হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে সম্পর্কিত অনেক কনটেন্ট চলে আসবে।

এই কনটেন্টগুলো আপনার কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমটাই “ডিজিটাল মার্কেটিং”।

অনলাইনে অনেক কোর্স এবং টিউটোরিয়াল আছে যেখানে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ফ্রি ক্লাস, বা ভিডিও অফার করা হয়। সেগুলোর মাধ্যমেও ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে বেশ ভালো ধারণা নেওয়া সম্ভব। 

10-Minute School, BYLCx – এধরণের চ্যানেল বা ওয়েবসাইটে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে অনেক ভালো ভালো কনটেন্ট পাবেন যা আপনার ক্যারিয়ারে আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

 

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার 

 

যেকোনো ফিল্ডে ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করলে টাকার কথা অবশ্যই মাথায় আসবে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না।

আপনি এই ফিল্ডে ক্যারিয়ার নিয়ে আগ্রহী হলে এখানে কি ধরণের কাজ আছে তা নিয়েও জানা থাকা জরুরী।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কথা উঠলে সবার আগে চলে আসে ফ্রিল্যান্সিং এর কথা।

অনেকের ধারণা, ডিজিটাল মার্কেটিং মানেই ফ্রিল্যান্সার। এটি ভুল। হ্যাঁ, ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং বেশ কার্যকর একটা বিষয় হতে পারে। তার মানে এই না যে আপনি ডিজিটাল মার্কেটার হলে আপনাকে ফ্রিল্যান্সারই হতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিংই যদি আপনার লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলেও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই।

Fiverr, Upwork – এধরণের ওয়েবসাইট থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং রিলেটেড অনেক কাজ পাওয়া যায়। তাছাড়া আজকাল সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম দিয়েও অনেকে ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ দিয়ে থাকে।

মার্কেটিং বা অ্যাডভারটাইজিং এর ফিল্ড দিনদিন আরো বিস্তৃত হচ্ছে। আর এর সাথে বাড়ছে দক্ষ লোকের চাহিদা। চাকরির ওয়েবসাইটগুলো ঘাঁটলেই দেখতে পারবেন সেলস আর মার্কেটিং এর জন্য অসংখ্য পদে প্রার্থী নিয়োগ চলছে। 

 

শেষ কথা

 

ডিগ্রির দিক দিয়ে একটু পিছিয়ে থাকলেও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে বড় বড় কোম্পানিতে চাকরি পাওয়া অসম্ভব কিছু না।

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করা মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে তাদের চাহিদা। 

2 thoughts on “ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার বাংলাদেশ”

  1. সাইফুল্লাহ ভাইকে ধন্যবাদ অনেক সুন্দর একটি আর্টিকেল লেখার জন্য।

    Reply
    • আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই, আপনার ওয়েবসাইটে আমাকে লেখালেখি করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।

      Reply

Leave a Comment