ইসলামের তখন সােনালী যুগ। চারিদিকে ইসলামের জয় জয়কার। ইসলাম ও মুসলমানদের বিজয় ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ছে দিক দিগন্তে । মুসলমানদের বিজয় গাথা অভিযান বেঈমান কাফিরদের টনক নড়িয়ে দিচ্ছে। অর্ধ জাহান জুড়ে সগর্বে মাথা উঁচিয়ে পতপত করে উড়ছে ইসলামের হেলালী নিশান। অমানবিক জুলুম-নিপীড়ন, অসহনীয় অন্যায়অত্যাচার আর সীমাহীন ত্যাগ তিতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ মুসলমানদের ভাগ্যাকাশে পাখা মেলেছে সুখ শান্তির শ্বেত পায়রা।
খেলাফতের সােনালী মসনদে তখন মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রা.)। তিনি অতীব নিপুণতা ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করছেন ইসলামি রাষ্ট্র। বিভিন্ন প্রান্তে প্রেরণ করছেন যুদ্ধাভিযান। মুজাহিদ বাহিনী ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলছে সম্মুখ পানে। আবার মরুভূমির খৈ ফোটা তপ্ত বালুকা রাশি মাড়িয়ে একের পর এক বিজয়ের শুভবার্তা নিয়ে ফিরে আসছেন রক্তাক্ত রণাঙ্গন থেকে। এভাবেই চলছিল লৌহমানব হযরত ওমর (রা.)-এর শাসনকাল ।
আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর (রা.)-এর শাসনকালে ইরানের একটি প্রদেশের শাসক ছিল হরমুজান নামক এক সুচতুর ব্যক্তি। সে ছিল চরম ইসলামবিরােধী। মুসলমানদের সে একদম সহ্য করতে পারত না। তাদের নাম শুনলেই তার গা জ্বালা শুরু হতাে। তাই ইসলাম ও মুসলমানদের উত্থানকে ঠেকানাে এবং তাদেরকে দুনিয়ার বুক থেকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য সে সর্বদাই সক্রিয় ভূমিকা পালন করত।
মুসলমানদের সাথে তার লড়াই হতাে প্রায়ই। এ বছর এ ময়দানে অন্য বছর আরেক ময়দানে। যুদ্ধে পরাজিত হলেই সে বিভিন্ন শর্তে সন্ধি করত এবং নিজ রাজ্যে ফিরে যেত। কিন্তু এরপর যখনই আবার সুযােগ পেত, তখনই বিভিন্ন উপায়ে মুসলমানদের ক্ষতি সাধনে তৎপর হয়ে উঠত।
একদা হযরত ওমর (রা.) মুজাহিদদের কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়ে বললেন, হরমুজানকে যে কোনাে উপায়ে জীবন্ত পাকড়াও করে আমার দরবারে এনে উপস্থিত কর। তার বিশ্বাসঘাতকতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তাকে আর সময় দেওয়া যায় না।
কিছুদিন পর মুসলমানদের সাথে হরমুজান বাহিনীর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হলাে। এক পর্যায়ে হরমুজান বাহিনী মুজাহিদদের হাতে চরম মার খেল। পরাজিত হলাে শােচনীয়ভাবে। এমনকি স্বয়ং হরমুজান মুসলমানদের হাতে বন্দী হলাে।
নির্দেশ মােতাবেক হরমুজানকে খলীফার দরবারে উপস্থিত করা হলাে। আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর (রা.) হরমুজানকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনি আমাদের সাথে বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আর আপনার বিশ্বাসঘাতকার কারণেই আমাদের একের পর এক যুদ্ধ বিগ্রহে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। ফলে রণাঙ্গণে অসংখ্য মুসলিম সৈন্যকে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তাদের অর্থ-সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। আপনি মুসলমানদের উপর বহু নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছেন। নিরীহ অনেক লােককে হত্যা করেছেন। তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিয়েছেন। কঠোর হস্তে মুসলমানদের উত্থানকে রুখে দাঁড়ানাের চেষ্টা করেছেন। আপনার নিষ্ঠুরতা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। সুতরাং আপনাকে আর সুযােগ দেওয়া যায় না । এখনই আপনার শাস্তি হওয়া প্রয়ােজন। আর আপনার একমাত্র শাস্তি হলাে মৃত্যুদন্ড । মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পূর্বে আপনার কোনাে কথা থাকলে বলতে পারেন।
হরমুজান খুব চালাক লােক। সুক্ষ্ম বুদ্ধির মানুষ। বিভিন্ন কৌশল আর ফন্দি এটে বড় বড় বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া তার জন্য কোনাে ব্যাপারই নয়। সুতরাং জীবনের এই অন্তিম মুহূর্তে দাঁড়িয়েও কৌশলের আশ্রয় নিতে তার বেশি সময় লাগল না।
সে বলল, মহানুভব খলীফা! আপনার অনেক মহত্ত্বের কথা আমি শুনেছি। এ মুহূর্তে আমার খুব পিপাসা লেগেছে। দয়া করে আমাকে একটু পানি পান করতে দিন।
খলীফার নির্দেশে তার জন্য পানি আনা হলাে। কিন্তু সুচতুর হরমুজান পানির পাত্র হাতে নিয়ে তা পান করতে ইতঃস্তত করল। সে পানি পান না করে ভীত সন্ত্রস্ত ভাব নিয়ে ডানে বামে তাকাতে লাগল।
খলীফা জিজ্ঞেস করলেন, জনাব! এদিক সেদিক তাকাচ্ছেন কেন? পানির তৃষ্ণা লেগেছে পানি পান করলেই তৃষ্ণা চলে যাবে।
: আমীরুল মুমিনীন! পানি হাতে নিয়েছি পান করার জন্যেই। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে যে, পানিটুকু পান করার আগেই আমাকে হত্যা করে ফেলা হয় কিনা? কাঁদো কাঁদো স্বরে হরমুজান বলল ।
: আপনি নির্ভয়ে পান করুন। হাতের পানি পান করার পূর্বে আপনাকে হত্যা করা হবে না। এ ব্যাপারে আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি। সান্ত্বনার স্বরে হযরত ওমর (রা.) বললেন।
হরমুজান এ সুযােগের অপেক্ষায়ই ছিল। সে আমীরুল মুমেনীন হযরত ওমর (রা.)-এর কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পাত্রের সবটুকু পানি মাটিতে ফেলে দিল। অতঃপর বলল-
মহামান্য খলীফা! একটু পূর্বে আপনি বলেছেন, হাতের পানিটুকু পান করার আগে আমাকে হত্যা করবেন না। আমি পানি ফেলে দিয়েছি। মাটি তা শােষণ করে নিয়েছে। এ পানি পান করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় । সুতরাং অঙ্গীকার অনুযায়ী আপনি আমাকে হত্যা করতে পারেন না।
উপস্থিত সকলেই হরমুজানের চালাকী বুঝতে পারল। তার এ চাতুর্যপূর্ণ বক্তব্য শুনে মুসলিম সৈনিকরা খুব রেগে গেল। তারা বলল-
আমিরুল মােমিনীন! আমাদের একটু অনুমতি দিন। আমরা তার চাতুর্যের সাধ জনমের মতাে মিটিয়ে দেই।
কিন্তু হযরত ওমর (রা.) অবিশ্বাস্য রকমের শান্ত। তিনি মােটেও উত্তেজিত হলেন না। রাগের কোনাে চিহ্নও তার চেহারায় ফুটে উঠল না। তিনি সকলকে থামিয়ে দিয়ে বললেন- না, তা হতে পারে না। মুসলমান : ওয়াদা ভঙ্গ করে না। তার কথার মূল্য অনেক। মুসলমান একবার যে কথা বলে, জীবন দিয়ে হলেও সে তা রক্ষা করার চেষ্টা করে। সুতরাং যে কথা আমি বলে ফেলেছি, যে কোনাে মূল্যে আমি তা রক্ষা করবই। যেহেতু আমি বলেছি, তার হাতের পানিটুকু পান করার পূর্বে তাকে হত্যা করব না, আর সে পানি পান না করে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তা মাটিতে ফেলে দিয়েছে, সুতরাং কোনাে অবস্থাতেই তাকে এখন হত্যা করা চলবে না।
অতঃপর আদর্শের মূর্ত প্রতীক রাসূলের প্রিয় সাহাবী হযরত ওমর (রা.) হরমুজানকে লক্ষ্য করে বললেন, যদিও মৃত্যুদন্ডই ছিল আপনার একমাত্র শাস্তি, তথাপি প্রতিশ্রুতি রক্ষার খাতিরে আমি আপনাকে হত্যা করলাম না। যান, আপনি এখন মুক্ত-স্বাধীন। যেখানে খুশি সেখানে চলে যেতে পারেন। আপনাকে এখন কেউ কিছু বলবে না।
খলীফাতুল মুসলেমীন হযরত ওমর (রা.) এর কথাগুলাে হরমুজানের হৃদয়ে বিরাট আলােড়ন সৃষ্টি করল। সে অস্ফুট স্বরে বলল, ওহ! কথার কি অদ্ভুত মূল্য। ওয়াদা পালনের কি অপূর্ব নজির!! জীবনের বাকে বাঁকে আমিও তাে কত ওয়াদা করেছি। কত চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি, কিন্তু কই, আমার পক্ষে তাে এমনটি সম্ভব হয়নি। সম্ভব হয়নি প্রতিশ্রুতি রক্ষার এমন অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে। তাহলে কি সত্যিই তারা আদর্শ মানব?
মুসলমানদের আদর্শের কথা, ওয়াদা পালনের বিরল দৃষ্টান্তের কথা এতদিন তাে লােক মুখে শুনে আসছিলাম। কিন্তু আজ? আজ তাে স্বচক্ষেই তা প্রত্যক্ষ করলাম । নিজের জীবনেই তা ঘটে গেল । এই যদি হয় তাদের আদর্শ, তাহলে কেন বিজয় তাদের পদচুম্বন করবে না? কেন তারা বিজয় মাল্যে ভূষিত হবে না? কেন পৃথিবীর দিকে দিকে তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে না?
একজন শাসকের চরিত্র যদি হয় এত সুন্দর, অনুপম ও নিষ্কলংক, তাহলে তার প্রজারা তাে সঙ্গত কারণেই উত্তরােত্তর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভ করবে। হৃদয়ে বইতে থাকবে আনন্দ আর প্রশান্তির বাধভাঙ্গা জোয়ার।
কথাগুলাে চিন্তা করে হরমুজান হযরত ওমর (রা.) এর দিকে চোখ তুলে তাকাল । সে দেখল, তার চেহারায় ব্যক্তিত্ব ও গাম্ভীর্যের ছাপ সুস্পষ্ট। মুখের প্রতিটি লােম কূপে যেন স্বর্গীয় দ্যুতি খেলা করছে। নূরের উজ্জ্বল। আভা বারবার চিকচিক করে উঠছে।
হরমুজান কল্পনাও করতে পারেনি যে, সে এত সহজে মুক্তি পাবে। সে ভেবেছিল, আজই তার জীবনের শেষ দিন। নাঙ্গা তলােয়ার এই বুঝি তার মস্তক দ্বিখন্ডিত করে দিবে। মরুভূমির তৃষিত মাটি শােষণ করে নিবে তার দেহের সবটুকু রক্ত। কিন্তু না, তা হলাে না। খলীফার মহানুভবতা তাকে বাঁচিয়ে দিল। নতুন করে ভাবতে শেখাল। সে চিন্তা করল, এই যদি হয় ইসলামের আদর্শ, এই যদি হয় একটি কথার মূল্য, তবে এ থেকে দূরে থাকা হবে আমার জন্য চরম দুর্ভাগ্য। সুতরাং আর দেরী করা যায় না । এখনই আমার মুসলমান হয়ে যাওয়া উচিত।
যেই ভাবা সেই কাজ। ইসলামের অতুলনীয় আদর্শে মুগ্ধ হয়ে ইসলামের চরম দুশমন হরমুজানের মুখ থেকে বেরিয়ে এল-
আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূহু।
প্রিয় পাঠক! এভাবেই মুসলমানদের অনুপম চরিত্র ও ইসলামের সুন্দরতম আদর্শে মুগ্ধ হয়ে যুগে যুগে অসংখ্য খােদাদ্রোহী বেঈমান, কাফের, ইহূদ, নাসারা ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছে। ধন্য করেছে আপন জীবনকে।
মুসলিম ভাইগণ! এই তাে ছিল আমাদের পূর্বসূরীদের নজিরবিহীন চরিত্র মাধুরীর বাস্তব নমুনা। কথা রক্ষার বিরল দৃষ্টান্ত। তারা যে কোনাে মূল্যে আপন ওয়াদা রক্ষা করে চলতেন। আর কেনই বা চলবেন না? তারা তাে সেই নবীর হাতে গড়া সাহাবী যার সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘােষণা করা হয়েছে-
“নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।” যার ওয়াদা পালনের অপূর্ব দৃষ্টান্তের ভুরি ভুরি প্রমাণ ইতিহাসের সােনালী পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। এসব দৃষ্টান্ত থেকে আমি কেবল একটি দৃষ্টান্ত পাঠকদের সম্মুখে পেশ করছি।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবিল খামসা (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে, যখন তার বয়স পয়ত্রিশ বৎসর, তখন তার সাথে কিছু ক্রয়-বিক্রয় করি। কিন্তু কথা পুরােপুরি চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বেই আমি একটি বিশেষ প্রয়ােজনে ক্ষণিকের জন্য কোথাও চলে যাই। যাওয়ার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, আপনি অনুগ্রহপূর্বক একটু অপেক্ষা করুন আমি অল্পক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসছি। জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু এতটুকু বললেন, ঠিক আছে। এরপর আমি চলে গেলাম।
কিন্তু খােদার কি কুদরত। সেখান থেকে আসার পর ঘটনাক্রমে আমি এ বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুলে গেলাম। আমার মােটেও স্মরণ রইল না যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন । এভাবে একটানা দুদিন চলে গেল। তৃতীয় দিন অপর এক কাজে আমি ঐ পথ ধরে হাটছিলাম, সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজ তিনদিন যাবত আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। হঠাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সামনে দেখতে পেয়ে আমার মনে হলাে, আরে! আমি না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাঁড় করিয়ে রেখে বিশেষ প্রয়ােজনে একটু সময়ের জন্য বাইরে এসেছিলাম। হায়! একথা তাে আমি সম্পূর্ণরূপে ভুলেই গিয়েছি। হায়! এখন আমি তাকে কি বলব? জানি তিনি আমার অপেক্ষায় কত কষ্ট করেছেন!
এসব কথা ভাবতে ভাবতে আমি এক পা দুপা করে সামনে অগ্রসর হচ্ছি। কিন্তু তার নিকট কি জবাব দিব, ভেবে ঠিক করতে পারছিলাম না। উপরন্তু আমার মনে ক্রমেই এ ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছিল যে, তিনি আমাকে নাগালে পাওয়ার সাথে আচ্ছামত ধােলাই দিবেন। গালমন্দ করবেন। কারণ আমার সাথে ওয়াদার কারণে একটানা তিনদিন তিনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি আসব বলে কথা দিয়েও আসিনি।
কিন্তু দয়ার সাগর, উত্তম আদর্শের মূর্ত প্রতীক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটে আসার পর আমার পূর্বোক্ত ধারণা সম্পূর্ণরূপে ভুল বলে প্রমাণিত হলাে। তিনি আমাকে দেখে কিছুই বললেন না। গােস্বা বা ক্রোধের কোনাে সামান্যতম চিহ্নও তার নূরানী চেহারায় পরিলক্ষিত হলাে না। শুধু শান্ত কণ্ঠে স্মিত হাস্যে এতটুকু বললেন, আব্দুল্লাহ তুমি আমাকে বেশ কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছ। তুমি যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এখানেই আমি তােমার জন্য অপেক্ষা করছি।
প্রিয় পাঠক! ওয়াদা পালনের এহেন নজির ইতিহাসের পাতায় দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে কি?
সুতরাং আসুন, আমরা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং হযরত সাহাবায়ে কেরামের শিক্ষার আলােকে নিজেদের জীবন গড়ে তুলি। মিথ্যা, ধোকা, প্রতারণা পরিহার করে অঙ্গীকার পালনের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেই। যখন, যেখানে, যেভাবে, যাকে, যে ওয়াদা প্রদান করব, ঠিক তখন সেভাবে, সেখানে তা পালন করার একশ ভাগ চেষ্টা করব । আন্তরিকভাবে আপ্রাণ চেষ্টার পরও যদি কোনাে কারণে সঠিকভাবে ওয়াদা পালনের ক্ষেত্রে কিছুটা ত্রুটি দেখা দেয়, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে নিজের ওরখাহী পেশ করে, নিজের অপারগতা ও সদিচ্ছার কথা জানিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করব। তবেই আমাদের ওয়াদা পালনের দায়িত্ব সঠিকভাবে আদায় হবে।
সম্মানিত পাঠক-পাঠিকা! চলুন না আমরা সবাই অনুরূপ অঙ্গীকার পালনের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে অঙ্গীকার পালনের উত্তম নজির তৈরি করি। যদি আমরা এমন হই, যেমনটি বললাম, তবে কি সুন্দর হতাে না? নিশ্চয়ই। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের তাওফীক দাও।
স্মরণীয় বাণী
সােনালী যুগের লােকজন একে অন্যের নিকট তিনটি কথা লিখে পাঠাতেন..
১. যে ব্যক্তি আখেরাতের জন্য আমল করে, আল্লাহ তাআলা তার দুনিয়ার জীবনেরও দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
২. যে ব্যক্তি নিজের ভিতরকে ইসলাহ করে, আল্লাহ তাআলা তার বাহিরকেও দুরন্দ্র করে দেন।
৩. যে ব্যক্তি নিজের মোয়ামালাহ আল্লাহ তাআলার সাথে ঠিক করে নেয়, আল্লাহ তাআলা মানুষের সাথে তার মেয়ামালাই ঠিক করে দেন।
– হযরত আউন বিন আব্দুল্লাহ (র.)
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। যদি এমন হতাম গল্পের বই থেকে।
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.