তখন ছিল হযরত সাহাবায়ে কেরামের যুগ। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন বেশ আগেই। সেই সাথে পরজগতে পাড়ি জমিয়েছেন অনেক সাহাবীও। তথাপী এখনও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) সহ প্রচুর সংখ্যক সাহাবী বেঁচে আছেন।
একদিনের কথা।
এক ব্যক্তি ইন্তেকাল করল। যথারীতি তাকে কাফন পরানো হল। জানাযা দেওয়া হল। তারপর দাফনের জন্য তাঁর শবদেহ নেওয়া হল কবরস্থানে। এখনই তাকে কবরে রাখা হবে।
প্রায় ঘন্টা খানেক পূর্বে কবর খনন শেষ হয়েছে। খনন শেষে খনন কারীরাও জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য চলে গিয়েছিল। লাশ দাফনের জন্য সবাই এখন কবরস্থানে উপস্থিত।
ইতোমধ্যে একটি বিরাট আকৃতির বিষধর সাপ কবরে চলে এসেছে। ভয়ংকর রূপ ধারণ করে গোটা কবর জুড়ে বসে আছে সে। লোকজন কবরের মধ্যে সাপ দেখতে পেয়ে ভীষণ ভয় পেল। সাহসী লোকেরা উহাকে সরানোর জন্য অনেক চেষ্টা চালাল। কিন্তু কিছুতেই সরানো গেল না। অগত্যা বাধ্য হয়ে তারা অন্য স্থানে কবর খনন করল।
খনন শেষে লোকজন উপরে আসার সাথে সাথে সেই সাপটির ন্যায় অনুরূপ আরেকটি সাপ সেখানেও দেখা গেল। ছোবল হানার জন্য প্রস্তুত হয়ে বসে আছে—সাপের ভাবসাব দেখে এমনটিই বুঝা গেল।
এবার লোকজন তৃতীয় আরেকটি কবর খুঁড়ল। কিন্তু সেখানেও দেখা গেল একই অবস্থা। পূর্বের ন্যায় আরেকটি সাপ ফণা তুলে বসে আছে। পরপর তিনটি কবরে একই অবস্থা প্রত্যক্ষ করে উপস্থিত লোকজন ভয়ে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ল।
লাশ এখন কি করা যায় এ নিয়ে তারা চিন্তিত হল। ভয় ও শংকার সুস্পষ্ট ছাপ ফুটে উঠল সকলের চেহারায়। শেষ পর্যন্ত তারা দৌঁড়ে গেল হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর কাছে। সবিস্তারে খুলে বলল পূর্ণ ঘটনা। সব কিছু শুনে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন—এ সাপ হল তাঁর কৃতকর্মের বাস্তবরূপ। আল্লাহর কসম, তোমরা জমিনের যেখানেই কবর খনন কর না কেন, এ সাপ সে কবরে থাকবেই। অবশেষে উপায়ন্তর না দেখে লোকেরা তাকে খননকৃত তিনটি কবরের একটিতে সমাধিস্থ করল। তারা লাশ রাখতে বাধ্য হল সেই ভয়ংকর সাপের উপরেই।
পরবর্তীতে মৃত ব্যক্তির বিবিকে এ ঘটনা শুনানো হলে সে বলল, আমার স্বামী গমের ব্যবসা করতেন। প্রায়ই তাকে দেখতাম অধিক লাভের জন্য গমের সাথে যব মিশিয়ে তিনি তা বাজারে বিক্রি করতেন। আমার মনে হয় তাঁর এ অপকর্মেই মৃত্যুর পর সাপ হয়ে তাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করেছে।
পাঠকবৃন্দ! জীবিকা নির্বাহের জন্য আমরা বিভিন্ন পেশা অবলম্বন করে থাকি। কেউ ব্যবসা করি, কেউ চাকরি করি, কেউ শিক্ষকতা করি আবার কেউ বা অন্য কোন পেশা অবলম্বন করি। এক্ষেত্রে আমাদের ভালভাবে স্মরণ রাখা দরকার যে, প্রত্যেক মুসলমানের নিজ নিজ পেশা সংক্রান্ত মাসআলা মাসায়েল জানা অপরিহার্য। অন্যথায় যে কোন ভুল ভ্রান্তি হলে এর দায় দায়িত্ব আমাদেরকেই বহন করতে হবে। সম্মুখীন হতে হবে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তির। আলোচ্য ঘটনাটি ব্যবসা সংক্রান্ত হওয়ার কারণে ব্যবসায়ী ভাইদের অনুরোধ করে বলছি, আপনারা ব্যবসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় মাসআলাসমূহ জানার জন্য মজলিশে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত, মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন কর্তৃক রচিত আহকামে জিন্দেগী নামক অতি মূল্যবান বইখানা ৩১৩ পৃষ্ঠা থেকে ৩৪৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পাঠ করে নিতে পারেন।
প্রিয় পাঠক! গমের সাথে যব মিলিয়ে বিক্রি করার দরুন যদি ভয়ংকর সাপের ছোবল খেতে হয় তবে আজকে যারা সরিষার তৈলের সাথে সয়াবিন মিশিয়ে, উঁচু মানের দ্রব্যের সাথে নিচু মানের দ্রব্য মিশিয়ে, ভালোর সাথে মন্দ মিশিয়ে বেশী টাকা কামাই করছেন, কবর জগতে ও কিয়ামতের ময়দানে তাদের অবস্থাটা কত মারাত্মক ও ভয়াবহ হবে তা একটু ভেবে দেখেছেন কি? মনে রাখবেন, আজ আপনি মানুষ্কে ফাঁকি দিয়ে যাই করছেন না কেন, একদিন কিন্তু এর প্রায়শ্চিত্ত আপনাকে করতেই হবে। জবাবদিহি করতে হবে পুঙ্খানুপুঙ্খানু ভাবে। তাই আসুন, ভেজাল ব্যবসা পরিত্যাগ করি, সততার সাথে ব্যবসা করি। যে কোন অবস্থায় মিথ্যা, প্রতারণা ও ধোঁকা প্রদান থেকে বিরত থাকি। এতেই আমাদের মঙ্গল ও কামিয়াবী রয়েছে। অন্যথায় ধ্বংস আমাদের অনিবার্য।
আরেকটি কথা। অনেকেই বলে থাকেন, হুজুর! বর্তমান জমানায় মিথ্যা না বলে ব্যবসায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। লাভ হবে দুরের কথা, কিছুদিন পর পুঁজিও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এর জবাবে আমি বলব, এটি একটি ভুল কথা। কারণ আপনি যখন সততার সাথে ব্যবসা করবেন, তখন বাহ্যিক দৃষ্টিতে লাভ কম হলেও মূলতঃ এর মধ্যেই বরকত হবে। এর দ্বারা আপনার যাবতীয় প্রয়োজন সুন্দর করে পুরা হবে। তাছাড়া কিছুদিন পর লোকজন যখন জেনে যাবে যে, আপনি মিথ্যা কথা বলেন না, ভেজাল ব্যবসা করেন না, ক্রেতাদেরকে ঠকান না, প্রতারণার সাথে ব্যবসা করেন না, তখন লোকজন অন্যের দোকান থেকে মাল না কিনে আপনার দোকান থেকেই মাল কিনবে। এতে আপনার বেচা-কেনার পরিমাণ বাড়তে থাকবে এবং লাভের পরিমাণও বেশী হবে। মোট কথা, সততা ও সত্যবাদিতার কারণে আল্লাহ তাআলাই এর মধ্যে বরকত দিবেন। এই ব্যবসাকে তিনিই আপন দয়ায় টিকিয়ে রাখবেন ইনশাআল্লাহ। সুতরাং তাঁর কথামত ব্যবসা করলে তাতে শেষ পর্যন্ত লাভবান হওয়া যাবে একথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের বুঝার তাওফীক দাও।
গল্পের সূত্র : হায়াতুল হায়াওয়ান ১ : ২২. আরও পড়তে পারেন: সাহসী মায়ের অমর কাহিনী (কাদেসিয়ার যুদ্ধের গল্প)
লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। হৃদয়স্পর্শী শিক্ষণীয় কাহিনী – হৃদয় গলে সিরিজ ১২ বই থেকে।
এরপর পড়ুন : সবচেয়ে বড় পাপ (শিক্ষণীয় গল্প)
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.