স্ত্রী কি স্বামীর জন্য রান্না বান্না করতে বাধ্য?

স্ত্রী স্বামীর জন্য রান্না বান্না করতে বাধ্য নয় এমন একটি লেখা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে এবং এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। সাফওয়ানা জেরিন নামের একজন নারী ফেসবুক ব্যবহারকারী নিচের এই লেখাটি পোস্ট করেছিলেন..। বিতর্ক শুরু এখান থেকেই। চলুন আগে এটি পড়ে নেই.. 

শরীয়ত মোতাবেক মেয়েরা স্বামীর জন্য রান্না করতে বাধ্য নয়!

“শরীয়ত মোতাবেক মেয়েরা হাজব্যান্ডকে রান্না করে খাওয়াতে বাধ্য না। তারপরেও অপরিসীম মায়া নিয়ে বছরের পর বছর মেয়েরা চুলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।

বছরের চাকা ঘুরে, রোজা যায়, ঈদ আসে, তাও মেয়েদের চুলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা থেকে কোনো ছুটি মেলেনা, কিছুতেই মেলেনা। রোজায় এক কাঠি রসনা বিলাস বেড়ে যেয়ে গৃহিণীকে রাত দুইটা নাগাদ ঢুলুঢুলু চোখে ঠেলতে হয়, চুলা ঠেলতে হয়।

রোযায় রান্নাই হয়ে যায় মেয়েদের বড় ইবাদত।

বছর ঘুরে, রোজা যায় ঈদ আসে, বাসার কর্তা বোনাস পায় ঈদ সেলিব্রেট করতে, বাসার বুয়াটাকে একটা হাজার টাকার নোট বোনাস না দিলে মুখ কালো করে থাকে। কিন্ত এই সারাবছর সারাজীবন চুলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গৃহিনীদের কোনো বোনাস নেই। ঈদে শাড়ি চুড়ি হয়তো জুটে, কিন্ত কেউ দুইটা হাজার টাকাও হাতে দিয়ে বলেনা এই ঈদে তুমি এটা তোমার মতো খরচ করো। জামাই ভাবে আমার বউকে তো সব কিনেই দিলাম ঈদে, আর কী লাগে! বা লাগলে হয়তো চাইবে! যেই মেয়ে বাবা মায়ের কাছে মুখ ফুটে দুইটা টাকা কোনোদিন চায়নি সে আপনার কাছে টাকা খুজবে? তাই এই ঈদে আপনার স্ত্রীকেও কিছু সারপ্রাইজ বোনাস দিন। একটা ফিজিবল এমাউন্ট হাতে দিয়ে বলুন এটা তোমার, তুমি যা ইচ্ছা করো!

বাংলাদেশে রান্না করা আর ঘরের কাজ করার মতো থ্যানক্সলেস কাজ আর নেই। তারপরেও আমরা মেয়েরা রানতে রানতেই কবরে চলে যাই। এই ঈদে আমরা নাহয় তাদেরকে একটু কৃতজ্ঞতাই জানাই?”

লেখিকাঃ সাফওয়ানা জেরিন।

উপরের এই পোস্টের জবাবে রহমান শামীম নামের একজন পুরুষ ফেসবুক ব্যবহারকারী নিচের এই লেখাটি পাবলিশ করেছেন। আমি মনে করি তার এই প্রত্যুত্তরটি যথেষ্ট শালীন ও যুক্তিসঙ্গত প্রত্যুত্তর হয়েছে, তাই আমার বাংলা পোস্ট ডট কমের পাঠক পাঠিকাদের জন্য হুবহু তুলে ধরলাম। 

পুরুষদের জন্য করণীয় কি? 

স্ত্রী কি স্বামীর জন্য রান্না-বান্না করতে বাধ্য? এমন প্রশ্নে বিতর্ক চলছে। নারীবাদে ইন্সপায়ার্ড হিজাব পরিহিতা কিছু লেখিকা এ প্রশ্ন নতুন করে তুলেছেন। এ থেকে আমার কিছু ভাবনা এলো!

—–কোট——-

প্রথম কমেন্টেই কুয়েতী স্কলার ডক্টর উসমান আল খামীস এর আড়াই মিনিটের ফতোয়া’র লিংক দিলাম।
মতভেদ আছে স্কলার্সদের মধ্যে, কিন্তু প্রসিদ্ধ মত হলো- মুসলিম পরিবারে স্বামীর যদি সার্ভেন্ট’র জন্য খরচ করার সামর্থ্য থাকে, তাহলে কোন মুসলিম মেয়ে বাধ্য না রান্না করতে বা ঘরদোর গোছাতে বা এগুলো করেই জীবন অতিবাহিত করতে!
এমনকি শাফেয়ী স্কলারদের মধ্য থেকে এমন একটা মত-ও আছে যে, বউ তো বাধ্য না, উল্টা যদি জামাই’র সামর্থ্য থাকার পরও বউ রান্না করে, ঘরের কাজ করে, তাহলে জামাইকে তখন এই কাজের জন্য বউকে “বেতন” দিতে হবে!!

—–আনকোট——-

উপরের কথাটা একটি লেখা থেকে কোট করেছি। ইদানীং কিছু লেখিকা কোরআন হাদিস দিয়ে প্রমাণ করতে চান যে, মুসলিম মেয়েরা স্বামীকে রান্না-বান্না করে খাওয়াতে বাধ্য নন। পাশাপাশি শ্বশড় শাশুড়ির সেবা করতেও তারা বাধ্য নন। সত্যিই কোরআনে সরাসরি এমন বাধ্যবাধকতা নেইও।

কিন্তু বাস্তব প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে একটা সংসারের রান্না-বান্না কে করবে? সংসারে যদি বৃদ্ধ শশুর শাশুড়ি থাকেন তাহলে তাঁদের দেখভাল কে করবেন? সোজা উত্তর হচ্ছে মেইড তথা সার্ভেন্ট। এখন কোরআন থেকে আমরা মেইড ও সার্ভেন্টের যে কনসেপ্ট পাই সেটা কি? কোরআনে কি বাসা বাড়ির বুয়া-আয়াদের কথা বলা হয়েছে? অর্থাৎ হাল-জমানার যে ‘বুয়া’ কনসেপ্ট, সেটা কোরআনের কোথায় আছে? যদি এমন কনসেপ্ট কোরআনে না থাকে তাহলে দেখতে হবে সিমিলার কিছু আছে কি না? যদি সিমিলার কিছু না থাকে বরং অলটারনেটিভ কিছু থাকে তাহলে আপনি কোনটা নিবেন? আপনাকে কোরআনে যেটা বলা আছে সেটাই নিতে হবে!

আমার ধারণা, কোরআনে হাল জমানার “বুয়া” কনসেপ্টটি নেই। বরং সেখানে “মিলকিল ইয়ামিন” নামক একটি ধারণা আছে। তাহলে প্রশ্ন হল- কোরআনে মিলকিল ইয়ামিন (উপপত্নী) নামক একটা ধারণা থাকতে একজন স্বামী “বুয়া” কেন নিবেন? তিনি নিজের স্ত্রীকে রান্না-বান্না থেকে রুখসত দিয়ে একজন মিলকিল ইয়ামিন রাখলেই তো সহিহ ইসলাম হয়! প্রশ্ন হচ্ছে স্বামী সার্ভেন্ট বা দাসী কেন রাখবেন? কোরআনে তো দাসীর কথা বলেনি বলেছে মিলকিল ইয়ামিনের কথা, যার স্ট্যাটাস দাসী থেকে ঢের উপরে!

অর্থাৎ, যেহেতু স্ত্রী কে কোরআন স্বামীর জন্য রান্না-বান্না ও সংসার ঝামেলা সামলাতে বাধ্য করেনি সেহেতু স্বামী স্ত্রীকে এসব থেকে মুক্তি দিয়ে একজন স্বামী কোরআন মানলেন, ভাল কথা। তো তিনি যেহেতু কোরআন মানছেন সেহেতু অর্ধেক মানবেন কেন? পুরোটাই তো মানা উচিৎ। সুতরাং তিনি একজন মিলকিল ইয়ামিন বা উপপত্নী নিয়ে আসলেন। এতে হিজাবী নারীবাদীদের মতে কোরআন মোতাবেক দাম্পত্য জীবনও চলল আবার স্বামীর রান্না-বান্না ও ঘরসংসারের ব্যবস্থাপনাও চলল! তো কোরআন মোতাবেক হাইকোর্ট দেখিয়ে হিজাবী নারীবাদীরা স্ত্রীর রান্না বান্না মওকুফ করিয়ে নিচ্ছেন কিন্তু স্বামীকে বুয়া দেখিয়ে মুলা খাওয়াতে চাইছেন কেন? উনারা বুয়া না বলে মিলকিল ইয়ামিন রাখার কথা বলছেন না কেন? আর সামর্থ্য যদি থাকেই তাহলে চার বউ কেন নয়? সবাইকেই বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ালো। মিলকিল ইয়ামিনও থাকলো। সুন্দর না ব্যাপারটা?

আসলে, ইসলামী স্কলারগন স্থান কাল পাত্র অনুযায়ী প্রত্যেকটা সংস্কৃতির (উরুফ) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন ফতোয়া দিয়ে থাকেন। এটাই ইসলামী নীতি প্রণয়নের পদ্ধতি। সে অনুযায়ী, ভারতীয় উপমহাদেশের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ধারা অনুযায়ী স্ত্রীর ঘর কন্যা সামলানোর এবং ইসলামের পর্দার বিধানের সমন্বয়ে যেটি সামঞ্জস্যপূর্ন সেটিই ইসলামী নীতির আলোকে যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে ফেমিনিজমের ধারনায় ইন্সপায়ার্ড হয়ে কেউ যখন কোরআন থেকে চেরিপিকিং করে প্রতিষ্ঠিত নীতিকে চ্যালেঞ্জ করেন তখন সেটা ভালো কিছু বয়ে আনে না।

পাগল কে সাকো নাড়ানোর কথা মনে করিয়ে দিয়েন না বোনেরা! আপনারা কইতেছেন সার্ভেন্টের কথা। এতে আমাদের মনে পইড়া গেল মিলকিল ইয়ামিনের কথা। পরে দেখা যাইবো ঘরে ঘরে মিলকিল ইয়ামিনে ভইরা গেছে। তখন কি আপনাদের সহ্য হইব? আফটার অল পুরুষ মানুষ তো! তাই না! 😀😀😀😀

লেখকঃ রহমান শামীম। 

Please follow our Facebook, Twitter, Instagram, Linkedin, Pinterest, Tumblr, And Youtube channels for more updates.

Leave a Comment