প্রতিশ্রুতি দিবস: অঙ্গীকারের এক অনন্য উৎসব

 প্রতিশ্রুতি দিবস (Promise day) প্রমিস ডে

প্রতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় প্রতিশ্রুতি দিবস, যা ভালোবাসার সপ্তাহের এক বিশেষ দিন। এই দিনে মানুষ একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, দায়িত্ববোধ ও বিশ্বস্ততার অঙ্গীকার করে। প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু, স্বামী-স্ত্রী কিংবা পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার প্রতিশ্রুতি নেন। তবে এটি শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; সামাজিক ও পেশাগত জীবনেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতিশ্রুতি হলো আস্থার ভিত্তি, যা সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী ও সুদৃঢ় করে তোলে, পাশাপাশি সৌহার্দ্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তোলে।

প্রতিশ্রুতি দিবস পালনের ইতিহাস সুদূরপ্রসারী হলেও আধুনিক যুগে এটি মূলত ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহের অংশ হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভালোবাসা শুধু আবেগের বিষয় নয়, বরং এটি দায়িত্ব ও আস্থারও প্রতীক। তাই এই দিনে মানুষ একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার অঙ্গীকার করে। যদিও এ দিবসটি পশ্চিমা দেশগুলোতে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, তবে বর্তমানে এটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরকে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দেন, বন্ধুরা বন্ধুত্ব অটুট রাখার শপথ নেন, এমনকি পেশাদার ক্ষেত্রেও সততা ও নিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়। 

বিশ্বব্যাপী প্রতিশ্রুতি দিবস উদযাপনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হয়, যেখানে মানুষ তাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের প্রতি দায়বদ্ধতা স্মরণ করিয়ে দিতে এ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সচেতনতা প্রচারণায় অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলো তরুণ সমাজকে নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন করতে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে। অনেক জায়গায় ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দিতে প্রতিশ্রুতি কার্ড, চিঠি ও উপহার বিনিময় করা হয়। 

বাংলাদেশেও প্রতিশ্রুতি দিবস ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই দিবসটি বেশ উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সামাজিক সংগঠন বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে এই দিনটি উদযাপন করে। কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে বিশেষ আয়োজন করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দিনে অনেকে তাদের ভালোবাসার মানুষদের প্রতি প্রতিশ্রুতির কথা প্রকাশ করেন। যদিও এটি এখনো বাংলাদেশের মূলধারার সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠেনি, তবে ধীরে ধীরে এ দিবসের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

প্রতিশ্রুতি দিবস পালনের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অপরিসীম। এটি শুধু উদযাপনের দিন নয়, বরং নৈতিকতা, বিশ্বস্ততা ও দায়িত্ববোধের প্রতীক। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা যেকোনো সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তোলে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে সুস্থ, সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। শুধু ভালোবাসার সম্পর্কেই নয়, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মজীবী এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও প্রতিশ্রুতির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রতিশ্রুতি শুধু মুখের কথা নয়, বরং এটি দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ। 

পরিশেষে বলা যায়, প্রতিশ্রুতি দিবস মানুষকে আন্তরিকতা ও বিশ্বাসের মূল্য উপলব্ধি করাতে সাহায্য করে। সম্পর্কের বন্ধনকে দৃঢ় করতে এবং ভালোবাসাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে প্রতিশ্রুতির কোনো বিকল্প নেই। এই দিনে আমরা সবাই যদি আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলোকে সত্যিকারভাবে রক্ষা করার অঙ্গীকার করতে পারি, তাহলে আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, সম্পর্ক ও সমাজ আরও সুন্দর ও শক্তিশালী হবে। প্রতিশ্রুতি শুধুমাত্র একদিনের বিষয় নয়, এটি আজীবন মেনে চলার একটি দায়িত্ব, যা আমাদের জীবনকে সার্থক ও পরিপূর্ণ করে তোলে।

লেখক: প্রকৌশলী অর্পণ পাল, বাংলাদেশ

Leave a Comment