এটি শায়েখ আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসী জীবনের হৃদয় বিদারক ঘটনা। যিনি ছিলেন একজন মহান সাধক, একেধারে কোরআনের হাফেয ও শায়খুল মাশায়েখ। কিন্তু একটি পরনারী আসক্তির কারণে তাকে সম্মানজনক স্থান থেকে বিচ্যুত করেছিলো। সম্মানিত লেখক তাঁর গল্পের মাধ্যমে আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসী’র জীবনের ঘটনাটি আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন। পড়ুন আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসীর দ্বীন থেকে বিচ্যুত হবার কাহিনী।
যে গল্পে হৃদয় কাঁদে (আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসী জীবনের ঘটনা)
হিজরী তৃতীয় শতক ছুই ছুই প্রায়। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র তখন বাগদাদ। সেই বাগদাদেরই এক মহান সাধক আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসী (র.)। তিনি ছিলেন শায়খুল মাশায়েখ। আক্ষরিক বিদ্যায় তার দৃষ্টান্ত যেমন বিরল ছিল, তেমনি আধ্যাত্মিক জ্ঞানে তিনি ছিলেন যুগ শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। তার ধী-শক্তি ছিল অসাধারণ। পবিত্র কুরআনের হাফেজ তো ছিলেনই বটে, হাদীসের বর্ণনাকারীদের নাম সহ ত্রিশ হাজার হাদীস তাঁর মুখস্থ ছিল। তার কণ্ঠে ছিল মধুর আকর্ষণ। তিনি সুললিত কন্ঠে যখন পবিত্র কুরআন পাঠ করতেন, আবাল-বৃদ্ধি বণিতারা তখন তন্ময় হয়ে তা শ্রবণ করতো। তাঁর এক একটি কথা, এক একটি বাণী মানব হৃদয় কেড়ে নিতো। আন্দোলিত হতো শ্রোতাদের দেহ-মন । ফলে তাদের হৃদয় সিংহাসনে স্থান পেত আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের অকৃত্রিম প্রেম, অফুরন্ত ভালবাসা ।
বাগদাদের এই মহান বুযুর্গ আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসী (র.)- এর আদি নিবাস স্পেনে। এজন্য তাকে শায়েখ স্পেনিশ বলে ডাকা হতো । তার উসিলায় গোটা ইরাকে আবাদ হয়েছিল হাজার হাজার খানকাহ, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শত-সহস্র মসজিদ-মাদরাসা । তাঁর ভক্ত-মুরীদের সংখ্যা ছিল বার হাজারেরও অধিক। তাঁর নূরাণী চেহারা, ফেরেশতা সুলভ আচরণ, অনুসরণীয় আমল-আখলাক যে কোনো দর্শককে মুগ্ধ করতো। মোটকথা, তৎকালীন সেই স্বর্ণযুগে শায়েখ স্পেনিশই ছিলেন বাগদাদ তথা গোটা ইরাকবাসীদের অন্যতম রাহনুমা- সরল পথ প্রদর্শনকারী ।
কিন্তু এতকিছুর পরও বাগদাদের এই মহান তাপসের জীবনে অতিবাহিত হয়েছে এমন এক দুঃসময়, যা ভাবতে কেবল অবাকই লাগে না, গা পর্যন্ত শিহরিয়ে উঠে, গন্ড বেয়ে মনের অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে দু’ফোটা তপ্ত অশ্রু । প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! তাহলে চলুন, আমরা এই মহান বুযুর্গের হৃদয়স্পর্শী কাহিনী ধৈর্য সহকারে শ্রবণ করি। সেই সাথে জেনে নেই, এই ঘটনার মূল কারণও ।
একদা আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলূসী (র.) সফরে বেরুলেন। সঙ্গে তার হাজার হাজার ভক্ত অনুরক্তের দল। যাদের মধ্যে হযরত জুনায়েদ বাগদাদী ও হযরত শিবলী (র.)- এর ন্যায় বড় বড় আলেম ও আধ্যাত্মিক সাধকগণ ছিলেন। সফরের উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সৃষ্ট এই বিশাল পৃথিবী থেকে জ্ঞান আহরণ ও পথভোলা মানুষের মাঝে হিদায়েতের আলো বিতরণ ।
স্থানে স্থানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে একটানা এগিয়ে চলছে বিশাল কাফেলা। সেই সাথে চলছে পরম প্রিয়তম মহান আল্লাহকে পাওয়ার চরম প্রতিযোগিতা । তাইতো দেখা যায়, রাত যত গভীর হয়, প্রভু প্রেমের খেলা ততই জমে উঠে। দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি সত্ত্বেও ভুলে যায় আরাম-নিদ্রার কথা। ভুলে যায় স্বীয় অস্তিত্বকে। কেউ যিকির-অযীফায় লিপ্ত হয়, কেউ নামাজে দাঁড়িয়ে যায়, আবার কেউ বা শাশ্বত বাণী কুরআনে পাক তিলাওয়াত করে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ।
এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর কাফেলা একটি বিশাল মরুপ্রান্তর অতিক্রম করলো। ইতোমধ্যে কোনো এক নামাজেরও সময় হলো । কিন্তু তখন কারো কাছেই ওজু করার মতো পানি ছিল না। ফলে সবাই পানির জন্য চিন্তিত হলো । ভাবলো, পানি না পেলে নামাজ না হয় তায়াম্মুম করে আদায় করলাম । কিন্তু খাওয়া ও অন্যান্য প্রয়োজন কিভাবে সারব?
ইত্যবসরে দূরে দৃষ্টি গোচর হলো একট জনপদ। শায়েখের নির্দেশে সবাই জনপদের উদ্দেশ্যে দ্রুত পদে এগিয়ে চলল। সেখানে গিয়ে অনুসন্ধান করে পানি পাওয়া গেল । নামাজও আদায় হলো। কিন্তু পানির সন্ধানকালে যে দৃশ্য শায়েখের দৃষ্টিগোচর হলো, তাতে তার মনে আত্মঅহমিকার সৃষ্টি হলো। স্রষ্টাকে ভুলে সৃষ্টির পূজা-অর্চনায় লিপ্ত সেখানকার লোকদেরকে দেখে তিনি মনে মনে ভাবলেন- তাদের তুলনায় আমি কতই না উৎকৃষ্ট। তারা সৃষ্টির উপাসনা করে, আর আমি স্রষ্টার ইবাদত করি। তারা সৃষ্টির প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা নিবেদন করে, আর আমি পরম প্রিয়তম মহান আল্লাহর প্রতি নিবেদন করি হৃদয়ের সমস্ত প্রেম ও ভালবাসা। সুতরাং তাদের চেয়ে আমি শতগুণে শ্রেষ্ঠ- এতে কোনো সন্দেহ নেই ।
মুহতারাম বন্ধুগণ! আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসী (র.) যা বলেছেন, যা ভেবেছেন তা ঠিকই আছে। কেননা পীর-বুযূর্গ কেন একজন সাধারণ মুসলমানও লক্ষ কোটি কাফেরের চেয়ে শতগুণে শ্রেষ্ঠ । কিন্তু যেহেতু তার কথা দ্বারা কিছুটা অহংকার ও আমিত্বের ভাব প্রকাশ পেয়েছে, তাই আল্লাহপাক তাকে এক মহা পরীক্ষার সম্মুখীন করলেন। বুঝিয়ে দিলেন- আশেক-মাশুকের বেলায় অহংকার আর আমিত্বের কোনো স্থান নেই । নিজেকে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট মনে করতে পারলেই সঠিক প্রেমের পরিচয় হবে। তাছাড়া এটি একটি স্বতঃসিদ্ধ কথা যে, যে যত বেশি নিকটবর্তী তার পরীক্ষাও হয় তত বেশি কঠিনতর। ফলে সামান্য কারণেই আল্লাহর নৈকট্যশীল প্রেমিক বান্দাদের অধিক কষ্ট ও পেরেশানী ভোগ করতে হয়, সম্মুখীন হতে হয় কঠিন থেকে কঠিনতর পরীক্ষায়। বাগদাদের মহান তাপস আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসী (র.) এর ঘটনায় এ সত্যটিই প্রমাণিত হয়েছে সর্বতোভাবে। প্রিয় পাঠক! আসুন, এবার আমরা মূল আলোচনায় ফিরে যাই । মনোযোগ সহকারে পাঠ করি ঘটনার বাকি অংশ ।
হযরত শিবলী (র.) বলেন- আমরা যেখানে পানির সন্ধান পেলাম সেখানে দেখলাম, কতিপয় রূপসী তরুণী কূপ থেকে পানি তুলছে। তরুণীদের সবাই প্রারম্ভ যৌবনা, সুডৌল সুঠাম দেহী, যেন এক একটি সদ্য ফোটা ফুটন্ত ফুল । এ পড়ন্ত বেলায় তাদের উজ্জ্বল চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল, যেন ঘন কৃষ্ণবর্ণ সাঝের ফাঁকে চৌদ্দ তারিখের পূর্ণিমার চাঁদ। বলতে গেলে সুন্দরী কেউ কারো চেয়ে কম নয়। তথাপি তাদের মাঝে সরদার কন্যাকে নক্ষত্রের বেষ্টনীতে পূর্ণিমার চাঁদের মতো দেখাচ্ছিল। মেয়েটির যৌবন পূর্ণ বিকশিত। চেহারায় রয়েছে এমন এক অভাবনীয় আকর্ষণ যা যে কোনো দর্শককে দেখা মাত্রই সম্মোহিত করতে সক্ষম । একজন যুবকের রাতের ঘুম হারাম করার জন্য একটি নারীর যে রূপগুণ থাকা দরকার তার সবই রয়েছে এই ভরা যৌবনা মেয়েটির। তদুপরী তার বাহ্যিক সাজসজ্জা তাকে করে তুলেছে আরো মোহনীয়। আরো কমনীয় ।
এই সর্বাধিক সুন্দরী তরুণীর প্রতি দৃষ্টি পড়তেই শায়খ সংযম ক্ষমতা হারিয়ে ফেললেন । আকন্ঠ ডুবে গেলেন অনিন্দ্য সুন্দরীর রূপ সুধায়। তাকে একান্ত করে কাছে পাওয়ার অদম্য স্পৃহা জেগে উঠলো তার হৃদয়ের মনিকোঠায়। ভাবখানা এমন যে, মেয়েটিকে স্ত্রী হিসেবে না পেলে শায়েখের জীবনটাই যেন পর্যবসিত হবে নিদারুণ ব্যর্থতায়।
কিছুক্ষণ পর মেয়েরা চলে গেল। চলে গেল সর্দার কন্যাও। শায়েখ তার গমন পথের দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে রইলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারলেন না। বসে পড়লেন মাথানত করে। খাওয়া-পরা নেই। কথাবার্তা নেই- এভাবেই পার হয়ে গেল তিনদিন তিনরাত। এর মধ্যে কেবল সময়মত নামাজটা আদায় করেছেন । মোটকথা শায়েখ তার প্রিয়তমার জন্য জাগতিক সবকিছু থেকে বিস্মৃত হয়ে কল্পনার জগতে হারিয়ে গেলেন।
ভক্তবৃন্দের বিশাল কাফেলা তার সাথে। শায়েখের এই অভূতপূর্ব পরিবর্তনে সবাই হতবাক, দিশেহারা, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এহেন পরিস্থিতিতে তারা কি করবে, কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছে না। অবশেষে ভক্তদের একজন একটু সাহস সঞ্চয় করে শায়েখকে জিজ্ঞস করল- আমার শ্রদ্ধাভাজন! আপনার কি হয়েছে? আপনি এমন করছেন কেন? অনুগ্রহ করে আপনার মনের কথাটি আমাদের সামনে খুলে বলুন । আপনার এই অবস্থা দর্শনে হাজার হাজার ভক্ত-মুরীদ অস্থির হয়ে পড়েছে।
ভক্তের কথায় শায়েখ মাথা তুললেন, বললেন- হে আমার প্রিয় শিষ্যগণ! আমার মনের কথা গোপন রেখে তোমাদের আর কতদিন কষ্ট দিব? শোন, সেদিন ঐ রূপসী তরুণীর সাথে চার চোখের মিলন হওয়ার পর থেকে আমি তার প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়ি। এখন আমার শিরা- উপশিরায়, প্রতিটি রক্ত কণিকায় তার প্রেমের স্পন্দন। আমার জীবন তরী ডুবে গেছে ঐ ষোড়শী-সুন্দরীর প্রেম সাগরে। ওহ! কি অনবদ্য রূপ তার। ও তো নারী নয়, যেন স্বর্গের অস্পরী। ওর চোখ ধাধানো রূপ, ওর দেহের সৌরভ আমাকে পাগল করে তুলেছে। ওর কথা, ওর ছায়া আমার সর্বাঙ্গে মিশে গেছে একাকার হয়ে। এই দেহে প্রাণ থাকতে ওকে ছেড়ে ফিরে যেতে পারব না আমি। পারব না এ প্রেমভূমি ছেড়ে পালিয়ে যেতে । সুতরাং আমার আশা ত্যাগ করে তোমরা সবাই দেশে ফিরে যাও।
এরপর হযরত শিবলী (র.) শায়েখকে লক্ষ্য করে বললেন- হে আমাদের প্রিয় মুরশিদ! কেন আপনার এই পরিবর্তন? কেন আপনি এ মেকী প্রেমের দুর্বলতার কথা প্রকাশ করছেন? যা অতীতে আপনার মধ্যে কখনোই ছিল না? আমরা সর্বদাই আপনাকে স্রষ্টার প্রেমে ডুবতে দেখেছি। আমরা জানি, রূপসী নারীর রূপ সৌন্দর্য অনেকই পাগল করে। কিন্তু তা কি সকলের বেলায়? যিনি খোদার প্রেমে আকন্ঠ নিমজ্জিত, খোদার মহব্বত যার শিরা-উপশিরায় সদা প্রবাহিত, যার নির্দেশনায় পথ খুঁজে পেয়েছে হাজারো আত্মবিস্মৃত মানব, এমন মহা-মনীষীর বেলায়ও কি এ কথা মেনে নেওয়া যায়? না, তা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।
প্রাণ প্রিয় মুরশিদ আমার! আপনার মতো মহান ব্যক্তির মধ্যে নারী প্রেম? এতো কল্পনারও বাইরে। এ অপমান, এ দুঃখ-বেদনা আমরা সহ্য করতে পারছি না। আপনার এই মেকী প্রেমের কারণে আমাদের ইজ্জত- সম্মান, সুনাম সবই ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে। আপনাকে এ অবস্থায় রেখে আপনি আমাদেরকে দেশে ফিরে যেতে বলেছেন। দেশে ফিরে গিয়ে লোকদের আমরা কি বলব? কিভাবে তাদের বুঝাব? আপনাকে কুরআনে পাকের দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি আপনার পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসুন । খ্রিস্টান সাদা চামড়া ওয়ালী মেয়ের রূপ-সৌন্দর্যের কথা ভুলে যান। কারণ খ্রিস্টানরা আল্লাহর দুশমন, নবীর দুশমন, সমস্ত মুসলমানের দুশমন । আপনি একটি খ্রিস্টান মেয়ের রূপ-লাবণ্যের ফাঁদে আটকা পড়েছেন । আমার ভয় হয়, ওর মোহ-মায়া আপনাকে কিনা ধর্মচ্যূত করে ছাড়ে। আপনার জন্য পাগল কত মানব মানবী! ওর চেয়ে সুন্দরী নারী কি মুসলিম পরিবারে নেই? আছে, বহু আছে। এমন কোন্ বিশ্ব সুন্দরী আছে, যে আপনার প্রণয় বন্ধনে আবদ্ধ হতে উৎসাহী নয়?
শায়েখ স্পেনিশ বললেন, হে আমার সন্তানেরা! আমার এবং তোমাদের মাঝে অদৃষ্টের লিখন প্রতিফলিত হতে চলেছে। বেলায়েত ও নৈকট্যের অমূল্য পোষাক আমার থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে হেদায়েতের সমুদয় চিহ্ন। আমি বিচ্ছিন্ন। আমি নিঃস্ব, নিরুপায়, অসহায়, একাকী। এ পর্যন্ত বলার পর শায়েখের গলা ধরে এলো । তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন । অনেক্ষণ পর বহু কষ্টে কান্না সংবরণ করে আবার বলতে লাগলেন- হে আমার সহচরবৃন্দ! যা কিছু ঘটছে, ঘটতে যাচ্ছে সবই কুদরতের লীলা খেলা। মহান প্রভুর সীমাহীন অভিমান ও ক্রোধের শিকার আমি। এখন আমি আর আমার ক্ষমতাধীন নই । সুতরাং আবারো বলছি, তোমরা ফিরে যাও ।
এ অপ্রত্যাশিত দুঃখজনক ঘটনায় ভক্ত মুরীদরা এমনিতেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় । তদুপরি শায়েখের অনাকাঙ্খিত বক্তব্যে তারা আরো ভেঙ্গে পড়লো। ঝরঝর করে ঝরতে লাগলো সকলের চোখের অশ্রু । শায়েখও কাঁদতে লাগলেন। চোখের পানিতে সকলের বুক ভেসে গেল। সিক্ত হলো উষর ভূমি। কেউ জমিনে গড়াগড়ি খেলো, কেউ পড়ে থাকলো অজ্ঞান অবস্থায়। কেউবা কাতর স্বরে আল্লাহর নিকট দোয়া করে বলল- হে বিশ্ব প্ৰভু মহান আল্লাহ! তুমি আমাদের শায়েখকে হিদায়েত দান করো। ফিরিয়ে দাও তাকে পূর্ণ মর্যাদা। আবার কেউ বা এ জগত থেকে বিদায় নিল মাত্রাহীন চিন্তা ও দুঃখে ৷ মোট কথা সব মিলিয়ে সেখানে সৃষ্টি হলো এমন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের, যা ইতোপূর্বে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি ।
অনেকক্ষণ পর বেহুঁশ সাথীদের জ্ঞান ফিরে এলে সবাই উঠে দাঁড়ালো, অতঃপর নিরাশ হয়ে ভগ্ন হৃদয় নিয়ে বাগদাদ অভিমুখে যাত্রা করল। কয়েকদিন চলার পর তারা যখন শহরের নিকটবর্তী এলাকায় পৌঁছল, তখন তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য লোকজন পাগলপারা হয়ে ছুটে এলো। কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে শহরময় এই উৎসাহের আমেজ, যার উদ্দেশ্যে বয়ে চলছে বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দের স্রোত, তাকে তো কাফেলার সাথে দেখা যাচ্ছে না। তবে কি তিনি আসেন নি? সবার মনে তখন এই প্রশ্নটিই ঘুরপাক খাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আদ্যোপান্ত ঘটনা যখন শুনলো তখন সাথে সাথে সৃষ্টি হলো আরেকটি মর্মস্পর্শী দৃশ্যের। ভক্তবৃন্দের গগণ ফাঁটা চিৎকার ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হলো। বিকট চিৎকার দিয়ে আরো কয়েকজন প্রাণ হারালো। বাকিরা ক্রন্দনরত অবস্থায় বিনীত প্ৰাৰ্থনা করে বলল- হে দয়াময় প্রভু! তুমি আমাদের শায়েখকে সহজ সরল ও সঠিক পথের সন্ধান দাও। আবারো বেঁধে নাও তাকে আপন প্রেমের ডোরে। খোদা হে! এক সময় তো শায়েখ ছিলেন তোমারই প্রেমের দেওয়ানা। আমরা যে তোমার প্রেম সাধনার পথ পেয়েছি, সে তো তাঁরই ঐকান্তিক চেষ্টার বদৌলতে। তাঁরই দীক্ষার ফলে আজ আমরা তোমার পথের পথিক। দু’হাত তুলে তোমার কাছে মোনাজাত করার তৌফিক যে তুমি দিয়েছো, সেতো তাঁরই মেহনতের ফসল। তাই তোমার শাহী দরবারে সবিনয় আরযী পেশ করছি আমাদের শায়েখকে ভ্রান্ত পথ থেকে ফিরিয়ে আন। মুসলমানদের চিরশত্রু খ্রিস্টানদের কবল থেকে তাকে মুক্তি দাও। হে খোদা! আমাদের শায়েখই যদি পথভ্রষ্ট হয়ে যান তবে আমাদের অবস্থা কি হবে?
হে দয়ার সাগর! গাফুর ও গাফ্ফার! শায়েখের প্রতি দয়া কর, দয়া কর এই পাপী তাপীদের প্রতিও। আমরা আমাদের শায়েখকে আমাদের পূর্বের অবস্থায় দেখতে চাই ।
মুনাজাত শেষে এক বুক দুঃখ নিয়ে সকলেই যার যার বাড়িতে ফিরে গেল। কিছু দিনের মধ্যে বিরান হয়ে গেল শায়েখের খানকাগুলো । কক্ষগুলোতে ঝুলতে লাগলো রং বেরংয়ের তালা। মুরীদানরা চলতে লাগলো যে যার মতো ৷
এভাবে চলতে থাকে অনেক সময়। দিন যায়, মাস যায়, বছর পেরোয়, কিন্তু এ পর্যন্ত শায়েখের কোনো সংবাদ নেওয়া হলো না। তাই ভক্তরা মিলে পরামর্শে বসল। সিদ্ধান্ত হলো ২/১ দিনের মধ্যেই একটি ছোট্ট কাফেলা শায়েখের সংবাদ নিতে যাবে ।
যথাসময়ে নির্দিষ্ট জনপদে কাফেলা পৌঁছে গেল। গ্রামবাসীদের জিজ্ঞেস করে জানলো, শায়েখ ঐ চারণভূমিতে শুকর চরাচ্ছেন। এতদশ্রবণে তারা চমকে উঠে বলল, একি দুঃসংবাদ শুনালে তোমরা! সত্যিই কি তিনি চারণ ভূমিতে শুকর চরাচ্ছেন? লোকেরা জবাবে বলল, হ্যাঁ, তিনি পল্লী সরদারের একমাত্র কন্যাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তিনি শর্ত সাপেক্ষে তা গ্রহণ করেছেন। শর্ত ছিল (১) খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে হবে (২) খ্রিস্টানদের রীতিনীতি পুরোপুরী মেনে চলতে হবে (৩) প্রতিদিন চারণভূমিতে গিয়ে শুকর চরাতে হবে ।
আপনাদের শায়েখ সবগুলো শর্ত অকপটে মেনে নিয়েছেন। ডুবে গেছেন পল্লী সর্দারের আদরের দুলালীর প্রেম সাগরে। বর্তমানে মুসলমানদের সামান্য চিহ্নও তার মধ্যে অবশিষ্ট নেই। তিনি আর এখন তোমাদের শায়েখ নন। তিনি এখন আমাদের চারণভূমির প্রধান রাখাল । যাও, ঐ চারণভূমিতে গিয়ে দেখ তিনি তোমাদের না আমাদের
এ অনাকাঙ্খিত সংবাদে ভক্তবৃন্দের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় আকার ধারণ করল। মনের অজান্তেই গড়িয়ে পড়ল ফোঁটা ফোঁটা তপ্ত অশ্রু। হারিয়ে ফেলল নড়াচড়া করার ক্ষমতাটুকুও।
বিষন্নমন। ক্লান্ত দেহ। এ অবস্থায়ই তারা চারণভূমির দিকে পা বাড়াল। এক পা দু’পা করে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় তারা যথাস্থানে পৌঁছে গেল। সেখানে গিয়ে শায়েখকে যে অবস্থায় তারা দেখতে পেল, তাতে কাটা ঘায়ে লবনের ছিটা লাগার মতো অবস্থা হলো। তারা দেখল শায়েখের মাথায় খ্রিস্টানদের হ্যাট, কোমরে বাধা পৈতা। আর যে লাঠিতে ভর করে ওয়াজ নসিহত ও খুতবা পাঠ করতেন, সেই লাঠির উপর ভর করে শুকর পালের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রাখালের ভূমিকায় ।
আগত ভক্তবৃন্দদের দেখে শায়েখ মাথা নীচু করলেন। তারা নিকটে পৌঁছে সালাম দিলে শায়েখ অতি নিম্ন স্বরে সালামের উত্তর দিলেন বটে, কিন্তু মাথা উত্তোলন করলেন না। তারা শায়েখের অতি কাছে গিয়ে বিনয়ের সাথে বলল, হযরত! আপনার এ কি অবস্থা? আপনি আমাদের পীর ও মুর্শিদ । শত সহস্র মানুষ আপনার পদধুলি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত, আর আপনি কিনা করছেন অন্যের গোলামী? তাও আবার মুসলমানদের নয়, মুসলমানদের চির শত্রু খ্রিস্টানদের? এই কি নিয়তির পরিহাস? প্রিয় মুরশিদ! আপনি চিন্তা করে দেখুন, শুকর চড়ানোর মতো নিকৃষ্টতম কাজ কি আপনার জন্য শোভা পায়? তবে কি আপনি আপনার মর্যাদার কথা ভুলে গেছেন? ভুলে গেছেন মহান আল্লাহর সাথে আপনার মধুময় সম্পর্কের কথা?
শায়েখ বললেন- হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা! আমি আর এখন আমার এখতিয়ারে নেই। আমি স্বেচ্ছায় কিছুই করছি না। রহিত হয়ে গেছে আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা। আমার মাওলা আমাকে যেমন চেয়েছেন তেমন করেছেন। তিনি যখন আমাকে এত নিকটে নেওয়ার পর আবার তাড়িয়ে দিয়েছেন, নিক্ষেপ করেছেন দূরে, বহু দূরে, তখন মাওলার এ সিদ্ধান্তকে কে খন্ডাতে পারে?
প্রিয় ভাইয়েরা! একটি কথা তোমাদের বলে রাখি। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ক্রোধ থেকে বেঁচে থাক। নিজের জ্ঞান বুদ্ধি ও পদমর্যাদার উপর গর্ব করো না ৷
অতঃপর তিনি আকাশ পানে তাকিয়ে বললেন- হে প্রভু! তোমার দরবার থেকে আমাকে লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও অপদস্থ বিতাড়িত করবে এ ধারণা তো আমার ছিল না। আমি তো কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি যে, ঐসব ঘৃণ্য পশু, যাদের অপবিত্র হওয়ার কথা পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে- তাদের সাথে গড়ে উঠছে আমার দারুণ সখ্যতা। আমার চেয়ে অধম আর কে আছে এ জগতে? এই বলে শায়েখ কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন । এরপর কান্না বিজড়িত কণ্ঠে ভক্তদের সম্বোধন করে পুনরায় বললেন, বন্ধুরা আমার! অপরের ঘটনা থেকে উপদেশ গ্রহণ কর। এতটুকু বলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শায়েখ আর কিছুই বলতে পারলেন না। তার কণ্ঠ আড়ষ্ট হয়ে এলো ।
শায়েখ যে আপন অপরাধের জন্য লজ্জিত, ব্যথিত ও অনুতপ্ত ভক্তবৃন্দের তা বুঝতে বাকি রইল না। কিন্তু সেই অপরাধটা কি? কেন শায়েখের উপর এই কঠিন পরীক্ষা? কেন তার এই অবিশ্বাস্য পরিবর্তন- তা বুঝতে বারবার চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হলো। সুতরাং এই করুণ মুহূর্তে আল্লাহর নিকট রোনাযারী ছাড়া তাদের কিই বা করার আছে? তাই তারা সম্মিলিতভাবে হাত তুলে কেঁদে কেঁদে বলল- হে বিরাট! হে মহান ! এ অগ্নি পরীক্ষা থেকে শায়েখকে মুক্তি দাও। বর্ষণ কর তার প্রতি তোমার রহমতের বারিধারা। তাকে সহজ, সরল, সঠিক পথের সন্ধান দাও। সুগম কর তার হেদায়েতের পথ ।
হে মহিয়ান গরিয়ান! ভুল করা মানুষের স্বভাব। তবে কেন তার প্রতি তুমি এত বিরাগ? তার পক্ষ হয়ে আমরাও তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ভিক্ষা করছি তোমার অসীম করুণা। হে আহকামুল হাকেমীন! তোমার রহম ও করমের ফায়সালা কর। তোমার প্রেম সাগরের তরঙ্গাঘাতে উদ্বেলিত কর তোমার এক কালের খাঁটি প্রেমিক শায়েখ স্পেনিশকে। তোমার প্রেমের বারিধারায় পবিত্র কর তার মেকী প্রেম কুফরির আবিলতা ।
শায়েখ ও ভক্তদের কান্নার প্রভাব শুকর পালের উপরও পড়ল । এরা শায়েখের চরণতলে সমবেত হয়ে গলাকাটা পশুর ন্যায় তপড়াতে লাগল । আর এত উচ্চঃস্বরে চিৎকার শুরু করল যে, সে চিৎকার ধ্বনি পাহাড় থেকে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হলো, প্রকম্পিত হলো আকাশ-বাতাস ।
একদিকে শায়েখ আর ভক্তবৃন্দের আহাজারি আর অপরদিকে শুকর পালের চিৎকার ধ্বনি আর গড়াগড়ি। সব মিলে সৃষ্টি হলো এক বিভীষিকাময় পরিবেশ। হাশর ময়দানের রূপ নিল এ চারণভূমি ।
অনেক্ষণ যাবত এ অবস্থা চলল। তারপর ধীরে ধীরে শান্ত হলো পরিবেশ । কিন্তু কারো মুখে কোনো কথা নেই । সকলেই নীরব । পিনপতন নীরবতা। এক সময় আগন্তুকদের মধ্য থেকে একজন নীরবতা ভঙ্গ করে জিজ্ঞেস করলেন- হুজুর! পবিত্র কুরআনের কোনো আয়াত কি আপনার স্মরণ আছে?
শায়েখ বললেন- দুটি ছাড়া সব আয়াতই ভুলে গেছি। তন্মধ্যে একটি হলো আল্লাহ তা’আলা যাকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেন, তাকে কেউ সম্মান দিতে পারে না। নিশ্চয় তিনি যা চান তাই করেন। (সূরা হজ্জ, আয়াত-১৮)
দ্বিতীয় আয়াতটি হলো- যে ব্যক্তি ঈমানের পরিবর্তে কুফর অবলম্বন করে তবে সত্যিই সে ভ্রান্ত পথের পথিক। (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১০৮)
প্রশ্নকারী আবার প্রশ্ন করল- হযরত! আপনার ৩০ হাজার হাদীস সনদসহ মুখস্থ ছিল। এখন কোনো হাদীস মনে আছে কি?
উত্তরে শায়েখ বললেন, সবই ভুলে গেছি, তবে একটি হাদীস ভুলে যাইনি। তা হলো যে ব্যক্তি আপন ধর্ম ইসলামকে বাদ দিয়ে নতুন ধর্ম গ্রহণ করে তাকে কতল করে দাও। (তিরমিযী, ১মখন্ড, পৃষ্ঠা : ২৭০)
প্রিয় পাঠক! শায়েখের স্মরণে থাকা দুখানা আয়াত ও একখানা হাদীসের দিকে গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বুঝা যায়, প্রকৃত প্রেমের তুষানলে তিলে তিলে বিদগ্ধ হচ্ছিলেন শায়েখ। আর বর্তমানে তিনি যা করছেন এটা তার অনাকাঙ্খিত । এ অবাঞ্চিত মেকী প্রেমে বাস্তবে তার অশান্তির কোনো শেষ ছিল না । তিনি প্রতি মুহূর্তে নিজেকে এখন অপরাধী মনে করছেন যা তার প্রতিটি কথা থেকেই বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু কুদরতের লীলা খেলার উপর যেহেতু কারো কোনো হাত নেই, তাই এবারও ভক্তদেরকে পূর্বের ন্যায় নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হলো ।
ভক্তবৃন্দ এক পা দু’পা করে তিন মনযিল পথ অতিক্রম করেছে। এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে দু’দিন দু’রাত। তৃতীয় দিন তারা একটি জলাশয়ের নিকট তাবু ফেলল। বিষন্ন মনে বসে বসে ভাবতে লাগলো, হায়! দেশে ফিরে আমরা শত-সহস্র ভক্তকে কী জবাব দেব? কি বলে সান্ত্বনা দেব তাদেরকে? তারা তো বড় আশা নিয়ে আমাদের পথ চেয়ে আছে। কিন্তু তাদের শ্রদ্ধা ভাজন সেই শায়েখকে তো নিয়ে যেতে পারলাম না ।
আল্লাহর কী অপার মহিমা! কাফেলার লোকজন যখন বসে বসে এসব চিন্তা করছিল, ঠিক এমন সময় তারা দেখলেন একটি নদী থেকে গোসল সেরে শায়েখ এদিকে এগিয়ে আসছেন এবং উচ্চঃস্বরে পড়ছেন-
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু ।
-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
শায়েখের এ অবস্থা দেখে কাফেলার লোকজন কি পরিমাণ আনন্দিত হয়েছিল তার অনুমান সেই করতে পারবে, যে ইতোপূর্বে তাদের দুঃখের অনুমান করতে পেরেছেন।
ভক্তরা জিজ্ঞেস করলো, হুজুর! আপনার এই পরীক্ষার পিছনে বিশেষ কোনো কারণ ছিল কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি যখন ঐ গ্রামে মূর্তিপূজক ও ক্রোশপূজকদেরকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য বস্তুর পূজা করতে দেখলাম, তখন আমার মনে অহংকার আসল যে, তাদের চেয়ে আমরা কতই না ভালো। আমরা তাওহীদে বিশ্বাসী। ইবাদতের উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহকেই মনে করি। আর ওরা কত বড় হতভাগা যে, সর্বদা নির্জীব পদার্থের উপাসনায় বিভোর থাকে। কেন? ওরা কি এতটুকু বুঝে না যে, প্রাণহীন এসব জড় পদার্থ কোনো কিছু করারই ক্ষমতা রাখে না? এদের বিবেক কি একবারও এ কথার সাড়া দেয় না? মোট কথা আমার এ সাত- পাঁচ ভাবনা অহমিকা ও আত্মম্ভরিতার রূপ ধারণ করল । যা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত ঘৃণিত ও অপছন্দনীয় ছিল। ফলে সাথে সাথে অদৃশ্য থেকে আওয়াজ ভেসে এলো- হে আবু আব্দুল্লাহ! এই ঈমান ও তাওহীদ তোমার সৌন্দর্য কিংবা বাহুবলে অর্জিত হয়নি। এগুলোর মধ্যে তোমার কর্তৃত্ব বলতে কিছুই নেই । এটা শুধু আমার অনুগ্রহ ও দয়ার ফল। আমার কৃপা দৃষ্টি তোমার প্রতি বর্ষিত না হলে এসবের কিছুই তুমি পেতে না। যদি তুমি বিশ্বাস না কর তবে এখনই এর প্রমাণ নাও ৷
এই অদৃশ্য আওয়াজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমি অনুভব করলাম, আমার হৃদয় চিড়ে প্রাণীর মতো কি যেন একটা উড়ে গেল। প্রকৃতপক্ষে এটাই ছিল আমার ঈমান ।
যা হোক এর পর কাফেলার লোকজন আপন শায়েখকে নিয়ে বাগদাদ অভিমুখে রওয়ানা দিল। এ সংবাদ পেয়ে কেবল আপামর জনসাধারণই নয়, বাদশাহ পর্যন্ত উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর জন্য এগিয়ে এলেন। সকলের চেহারায় ফুটে উঠলো আনন্দের ঝলক। চোখের কোণ ভরে গেল অব্যক্ত আনন্দের আসুতে । শায়েখ পূর্ব কাজে মনোনিবেশ করলেন দ্বিগুণ উদ্যমের সাথে। খুলে গেল সকল খানকার তালাবদ্ধ কক্ষগুলো। পুরোদমে শুরু হলো, দরস্-তাদরীস, ওয়াজ-নসিহত ও আত্মশুদ্ধির যাবতীয় কার্যক্রম ।
শায়েখ ফিরে পেলেন তার বিস্মৃত ইল্ম। ভক্তবৃন্দের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগল দ্রুত গতিতে । দেখতে দেখতে চল্লিশ হাজারের কোঠায় পৌঁছে গেল মুরীদানদের সংখ্যা ।
অনেকদিন অতিবাহিত হলো। এর মধ্যে নতুন কোনো ঘটনার অবতারণা হয়নি । কিন্তু হঠাৎ একদিন কাক ডাকা ভোরে শায়েখের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শোনা গেল। দরজায় তখন হযরত শিবলী (র.) ছিলেন। তিনি দরজা খুলে দেখলেন আগন্তুক একজন ভদ্র মহিলা। তার গোটা দেহ কালো কাপড়ে আবৃত। শিবলী (র.) জিজ্ঞেস করলেন- আপনার পরিচয় কি? কোত্থেকে এসেছেন আপনি?
ভদ্র মহিলা বললেন, আপনার শায়েখকে বলুন, তার ফেলে আসা প্রেম কাহিনীর স্মৃতি বিজড়িত খ্রিষ্টান মেয়ে তার খেদমতে উপস্থিত। আর আমি তার প্রেম ভিখারীনি- এটাই আমার পরিচয়।
এ সংবাদ শুনা মাত্রই শায়েখের দেহে কম্পন শুরু হলো । অতঃপর অতি কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে মহিলাকে ভিতরে আসার অনুমতি দিলেন । আগন্তুক ভদ্র মহিলা আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসী (র.) কে দেখামাত্র তার দু’চোখ বেয়ে অশ্রুর বন্যা বইতে লাগল। কান্নার আওয়াজ গলার মধ্যে আটকে গেল। দম বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম হলো। শায়েখও তার অবস্থা দেখে হতবাক! ভাবছেন, দূর দূরান্তের দুর্গম মরুপ্রান্তর পেরিয়ে অচেনা এই শহরে তার আগমন কি করে সম্ভব হলো? তাও আবার এই কাক ডাকা ভোরে? নীরব উভয়ে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কিছুক্ষণ পর ভদ্র মহিলা একটু শান্ত হলে শায়েখই নীরবতা ভঙ্গ করে জিজ্ঞেস করলেন, কি খবর তোমার? কিভাবে এখানে এলে? কে সেই মহান ব্যক্তি যিনি তোমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছেন?
ভদ্র মহিলা বললেন, হে প্রাণাধিক প্রিয়তম! সেদিন যথাসময়ে আপনার ফিরে না আসায় আমি অস্থির হয়ে পড়ি। সময়ের তালে তালে সেই অস্থিরতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। শেষ পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে যখন জানলাম, সত্যিই আমার মনের মানুষটি বিদায় নিয়ে চলে গেছেন, তখন আমার অস্থিরতা শতগুণে বৃদ্ধি পেল। শুরু হলো হৃদয়ে প্রলয়ংকরী ঝড় ৷ যে ঝড় দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে গেল আমার অস্তিত্ব।
হে প্রিয়তম! বলুন তো, আমি আমার জীবন-যৌবন, দেহ-মন, মান- সম্ভ্রম সবই কি আপনার চরণতলে সঁপে দেইনি? আপনার নির্দেশে আমি অগ্নি সাগরেও ঝাঁপ দিতে রাজি। তারপরেও কেন আপনি আমাকে ফেলে চলে এলেন?
প্রেমাষ্পদ আমার! আমি একজন অবলা, অসহায় নারী। এমন কে আছে, যে আপনার সন্ধানে আমাকে নিয়ে ঘুরে ফিরবে দেশ থেকে দেশান্তরে? আপনি চলে আসার পর আমার দুঃখের রজনী কেবল দীর্ঘই হতে থাকে। ভুলে যাই খাওয়া পরার কথা। ভুলে যাই বিছানায় পিঠ লাগিয়ে নিদ্রা যাওয়ার কথা। রাত-দিন আমার কাছে বরাবর হয়ে গেল । ফলে শেষ পর্যন্ত আমার অস্থির উপর চর্মের আবরণী ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকল না ।
প্রিয়তম! আপনার সাথে সাক্ষাতের সম্ভাব্য কোনো পথ তখন আমার সামনে খোলা ছিল না। কিন্তু মন তবুও বলছিল তোমার স্বপ্ন একদিন বাস্তবায়িত হবে। সুহাসিনী ভোরের আলো অবশ্যই দেখতে পাবে। অবচেতন মনের কুঠুরিতে কুদরতের সেই হাতছানীর ইঙ্গিত আমি পেয়েছি ।
প্রিয়! গত রাতে আমার অবস্থা কেন জানি আরও শোচনীয় হয়ে পড়লো। অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগলাম। অবশেষে প্রভু সকাশে কাকুতি-মিনতি করে বললাম- হে দয়ার সাগর! হে পরম করুণাময়! আমি অসহায় দুর্বল এক নারী। আমি অবলা। আমি শক্তিহীন। প্রিয়তমের বিরহ যন্ত্রণা যে আমি আর সইতে পারছি না ।
হে বিভু! যার কাছে সমর্পণ করেছি আমার হৃদয়-মন; যার চরণে নিবেদন করেছি জীবন-যৌবন, ধন-মান-সর্বস্ব। মৃত্যুর পূর্বে একবার হলেও যেন তার সাক্ষাত আমার নসিব হয় ।
প্রার্থনা শেষে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি টের পাইনি। হঠাৎ স্বপ্নে দেখি, সর্বময় মানবীয় গুণের অধিকারী এক ভদ্রলোক আমার সামনে দন্ডায়মান । তিনি আমাকে বললেন- শায়েখ স্পেনিশের প্রতি তোমার ভালবাসা অকৃত্রিম, তার প্রেমে তুমি পাগলপারা ঠিকই, কিন্তু তার স্নেহ-পরশ, প্রেম-প্রীতি তথা সান্নিধ্য পেতে হলে তোমাকে ইসলাম ধর্ম কবুল করতে হবে। তোমার প্রেমে পড়ে শায়েখ যেমন শান্তির ধর্ম ইসলাম ত্যাগ করেছিলেন, ঠিক তেমনি তোমাকেও পৌত্তলিকতার বিশ্বাস ছাড়তে হবে। ছাড়তে হবে ত্রিত্ববাদের ভ্রান্ত মতবাদ। তবেই তোমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হওয়া সম্ভব ।
আমি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম, ইসলাম কাকে বলে? লোকটি জবাবে বললেন-ইসলাম হলো এ কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করা যে, উপাসনার উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহ। তিনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই এবং হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল ।
আমি বললাম, আপনার সব কথা আমি মানতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু তার পদ সেবায় কোনো দিন কি পৌঁছা সম্ভব? জানি না তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন? বড় কথা হলো কে-ই বা আমাকে সেথায় পৌঁছে দিবে?
মহানুভব লোকটি বললেন- কিছুক্ষণের জন্য তোমার চক্ষু বন্ধ কর এবং তোমার হাত আমার হাতে রাখ। আমি মনে মনে তাকে ধন্যবাদ দিয়ে তার নির্দেশ পালন করলাম। তিনি আমাকে নিয়ে কয়েক কদম হাঁটলেন । তারপর বললেন চোখ খোল ।
আমি চোখ খুলে অবাক হলাম। ধারণা করলাম এটা বাগদাদ শহর হবে। কারণ বাগদাদ সম্পর্কে পূর্বে যা শুনেছি, সেই দৃশ্যই তখন আমার চোখের সামনে ভাসছিল। ইতোমধ্যে হৃদয়বান লোকটি আপনার খানকা শরীফের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এটাই শায়েখ স্পেনিশের হুজরাখানা । ওখানে গিয়ে মনের কথা ব্যক্ত কর। আর আমার ব্যপারে বলবে যে, আপনার বন্ধু খিজির আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন ।
প্রিয়তম! এ দাসী আপনারই। সে আপনার চরণতলে জীবন উৎসর্গ করে ধন্য হতে চায় । ত্রিত্ববাদের ভ্রান্ত মতবাদ ত্যাগ করেছি। আশ্রয় নিতে এসেছি ইসলামের সুশীতল ছায়ায়। এসেছি আমার প্রাণধিক প্রিয়ের সেবা করে নির্ভেজাল প্রেমের পরিচয় দিতে। সুতরাং অনুগ্রহ পূর্বক অবিলম্বে আমাকে মুসলমান বানিয়ে আপনার চরণসেবা করার সুযোগ দিন।
শায়েখ তাকে মুসলমান বানালেন । তারপর তার জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ কামরা নির্বাচন করে বললেন- জীবনের বাকি দিনগুলো এখানে থেকে আল্লাহর প্রেম সাধনায় অতিবাহিত করতে চেষ্টা করো। প্রয়োজনীয় সবকিছু যথাসময়ে পেয়ে যাবে। তারপরও যদি কিছুর প্রয়োজন হয় তবে খাদেমকে দিয়ে আমাকে অবহিত করবে ।
মহিলা নির্ধারিত কামরায় চলে গেল। শুরু হলো নতুন জীবন। এখন তার একমাত্র সাধনা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ। যেহেতু জীবনের একটা বিরাট অংশ কেটে গেছে ত্রিত্ববাদ ও ভ্রান্ত মতবাদের উপর, জীবনের আর ক’দিনই বা অবশিষ্ট আছে? তাই তিনি আহার নিদ্রার কথা ভুলে গিয়ে আল্লাহর প্রেম- সাধনার মাধ্যমে অতিবাহিত করতে লাগলেন দিবা-রজনী এখন তার শ্বাস-প্রশ্বাসে শুধু পরম প্রেমময় মাবুদের স্মরণ। প্রতিটি শিরা- উপশিরায় কেবল তারই প্রেমের জোড়ালো স্পন্দন ।
অল্পদিনের মধ্যে ভদ্র মহিলা আধ্যাত্মিক জগতে কল্পনাতীত উন্নতি লাভ করলেন। কিন্তু কঠিন পরিশ্রমের ফলে অতিশয় দুর্বল হয়ে পড়লেন। সেই ভরা যৌবনময় আবেদনময়ী কুসুম-কোমল নিটোল দেহ আজ কংকালসার। অপরিচিত কেউ দেখলে ভয়ে আঁতকে উঠবে। এভাবে চলতে চলতে শেষ পর্যন্ত তিনি মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয়ে আল্লাহর স্মরণের পাশাপাশি শায়েখের সাথে সাক্ষাতের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। মনে মনে বললেন হায়! যার বিরহ বেদনা সইতে না পেরে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু- বান্ধব, দেশ-ধর্ম ত্যাগ করে পালিয়ে এলাম এই সুদূর মায়াপুরীতে, জীবন সায়াহ্নে কি একটি বারের জন্যেও তার দেখা পাব না? এই কি ভাগ্যের লিখন? হায়! ভুল তো আমারই। আমি তো আমার দূরবস্থার কথা কখনও তাকে অবহিত করিনি।
ভদ্র মহিলা জীবনের শেষ লগ্নে এসে খাদেমকে দিয়ে এই বলে সংবাদ পাঠালেন যে, তুমি গিয়ে শায়েখকে বলো, তিনি যেন এই হতভাগিনীকে এক নযর দেখে যান । খাদেমকে তিনি আরো বললেন, শায়েখ যদি কারণ জিজ্ঞেস করেন, তবে বলবে, খোদার ভয় এবং আপনার বিরহ যন্ত্রণাই তাকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌছে দিয়েছে। তার শেষ নিঃশ্বাসটুকু ইন্তেজার করছে শুধু আপনাকে এক নজর দেখার জন্য ।
শায়েখ সংবাদ পেয়ে কালবিলম্ব না করে সেখানে উপস্থিত হলেন। তাকে দেখে শায়েখ অশ্রু সংবরণ করতে পারলেন না। ভদ্র মহিলা শায়েখের আগমন টের পেয়ে অপলক নেত্রে শায়েখের দিকে তাকিয়ে রইলেন । মনে হলো, যেন হাজার বছরের না বলা কথাগুলো কয়েক মুহূর্তে বলে যাচ্ছেন। উভয়ের মাঝে বাহ্যিক পর্দার অন্তরাল থাকলেও একে অপরের হৃদয়ের ভাষা বুঝতে উহা কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে না।
ভদ্র মহিলার চোখ থেকে তখন অঝোর ধারায় অশ্রু বারছে। কিছুতেই তিনি অশ্রু সংবরণ করতে পারছেন না। অবশেষে ক্ষীণ কন্ঠে বলেই ফেললেন- হে নির্দয়, নিষ্ঠুর অশ্রু! বিদায় বেলায় প্রিয়তমকে নয়নভরে এক নজর দেখতে দাও। তারপর তুমি যত ইচ্ছা প্রবাহিত হইও, তাতে আমার কোনো দুঃখ থাকবে না। থাকবে না কোনো বাধাও। অতঃপর ভদ্র মহিলা বহু কষ্টে শায়েখ স্পেনিশকে সালাম দিতে সক্ষম হলেন। শায়েখ কান্না বিজড়িত কন্ঠে সালামের জবাব দিয়ে বললেন, চিন্তা করো না। চির শান্তির জায়গা বেহেশতের মধ্যে অতিসত্তর তোমার আমার মিলন হবে, ইনশাআল্লাহ । একথা শুনার সাথে সাথে ভদ্র মহিলার ঠোঁটে এক চিলতে মধুর হাসি দেখা গেল । পরক্ষণেই এই বিশ্ব জগতের মায়া-জাল ছিন্ন করে পরপারে পাড়ি জমালেন । চলে গেলেন অনন্তের পথে । ইন্নালিল্লাহি ওয়া………….।
স্নেহময়ী প্রেয়সীর বিয়োগ ব্যাথায় শায়েখ স্পেনিশও জ্ঞান হারালেন । চোখের কোণে দেখা গেল দু’ফোটা অশ্ৰু । তার সফরের পথও সংক্ষিপ্ত হয়ে এলো । কয়েকদিন পর তিনিও এ ধরাধাম ত্যাগ করে চির বিদায় গ্রহণ করলেন । ইন্নালিল্লাহি ওয়া……..
হযরত শিবলী (র.) বলেন, কয়েকদিন পর আমি স্বপ্নে দেখলাম, আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসী (র.) বিশাল বিস্তীর্ণ সবুজ শ্যামল উদ্যানে উপবিষ্ট তার চারপাশে ৭জন আয়াতলোচনা হুর দাড়িয়ে। যাদের রূপ সৌন্দর্য সূর্যের আলোকেও ম্লান করে দেয়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুন্দরী যে মেয়েটি এবং যার সাথে শায়েখ সর্বপ্রথম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তিনি হলেন সেই মেয়ে যার প্রেমে এক সময় তিনি পাগল পারা ছিলেন। যার রূপের মোহ তাকে করেছিল বিভ্রান্ত ও ধর্মচ্যূত ।
প্রিয় পাঠক! আল্লাহ পাক গর্ব-অহংকার মোটেও পছন্দ করেন না । প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গর্ব অহংকারকে আখবাছুল খাবায়েছ তথা জঘন্যতম ঘৃণ্যবস্তু বলে আখ্যায়িত করেছেন । এতবড় একজন আল্লাহর ওলীর মারাত্মক পদস্খলন, কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া- তাও কিন্তু এই অহংকারের ফলেই হয়েছে। তাই আসুন, অহংকার নামক এই মহা ব্যাধিকে আমরা দিল থেকে বের করে দেই, নিজের আমিত্বকে খতম করে ফেলি, অন্তরে স্থান দেই বিনয়-নম্রতা ও নিজকে ছোট ভাবার মহৌষধ। আর এজন্য আধ্যাত্মিক জগতের ডাক্তার-হক্কানী পীর-মাশায়েখদের শরাণাপন্ন হই। তাদের মাধ্যমে ধৈর্যের সাথে চিকিৎসা গ্রহণ করি। স্বচ্ছ-সুন্দর করি যাবতীয় আবিলতা থেকে অন্তর নামক আয়নাটিকে । হে দয়াময় প্রভূ! তুমি আমাদের তৌফিক দাও। আমীন। *
টুকরো কথা
এটা সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে, মানুষ আল্লাহর হুকুম পালন করলে আল্লাহ তাআলা তার জরুরত পূর্ণ করবেন। কিন্তু আসবাব দ্বারা জরুরত পূর্ণ হবে—এটা মোটেও নিশ্চিত নয় । -বিশ্বইজতেমায় প্রদত্ত বয়ান, ২০০০ইং
লেখক: মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। লেখকের যে গল্পে হৃদয় কাঁদে – হৃদয় গলে সিরিজ ১০ বই থেকে সংগ্রহিত।