অপূর্ব রাসূল প্রেম এটি একজন সাহাবিয়ার রাসূল (সাঃ) প্রতি ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশের ঘটনা যা ওহুদ যুদ্ধের শেষের দিকে ঘটেছিলো। সম্মানিত লেখক তাঁর গল্পের বই “নারী জীবনের চমৎকার কাহিনী” তে উল্লেখ করেছেন। আমার বাংলা পোস্ট.কমের গল্প প্রিয় পাঠক পাঠিকাদের জন্য এখানে হুবহু তুলে ধরা হলোঃ

অপূর্ব রাসূল প্রেম (এক সাহাবীয়া রাসূলের প্রতি ভালোবাসার গল্প)
ঐতিহাসিক ওহুদ যুদ্ধের কথা। তখন সবেমাত্র যুদ্ধ শেষ হয়েছে । সামান্য ভুলের কারণে মুসলমানদের দিতে হয়েছে চরম মাশুল । সত্তরজন সাহাবী শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন দোজাহানের সর্দার স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । তার দাঁত মোবারক ভেঙ্গে গেছে । মারাত্মক চোট পেয়েছেন মাথা মোবারকেও।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন এ তো সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। আর এই অসাধারণ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শয়তানের দোসররা একটি মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে দেয় । তারা বলতে থাকে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শহীদ হয়ে গেছেন।
এ মিথ্যা সংবাদটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগলো না । এ কান থেকে ও কানে, ও কান থেকে ঐ কানে এভাবে ছড়াতে ছড়াতে এক সময় তা মদীনায়ও পৌঁছলো। এতে সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। নবী প্রেমিক হযরত সাহাবায়ে কেরাম এদিক সেদিক ছুটোছুটি করতে লাগলেন। পুরুষ সাহাবীগণ তো পূর্ব থেকে জিহাদের ময়দানে ছিলেন । যারা বিভিন্ন ওজরের কারণে জিহাদে যেতে পারেননি তারাও ভীষণ রকমের অস্থির হয়ে গেলেন । এমনকি মহিলা সাহাবীগণও পেরেশান হলেন সীমাহীন পর্যায়ের । কেউ কেউ বের হয়ে গেলেন ঘর থেকে ।
অস্থির, উদ্বিগ্ন মহিলা সাহাবীদের মাঝে এক আনসারী সাহাবী ও ছিলেন। সঠিক সংবাদ জানার জন্য ইতোমধ্যেই তিনি ওহুদের পথে রওয়ানা দিয়েছেন। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলেন, মুসলিম মুজাহিদগণ প্রত্যাবর্তন করছেন। তাদেরকে দেখে তার আবেগ ও আগ্রহ শতগুণে বেড়ে গেলো। বুক দুরু দুরু করছে তাঁর। না জানি কি সংবাদ বয়ে এনেছেন তারা। মুজাহিদগণ নিকটবর্তী হতেই তিনি অস্থির চিত্তে জিজ্ঞেস করলেন, আমার প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন আছেন ?
একজন বলে উঠলো, যুদ্ধে তোমার পিতা শাহাদত বরণ করেছেন ।
পিতার শাহাদতের সংবাদ শুনে মুখে কেবল ইন্নালিল্লাহ পাঠ করে পুনরায় অস্থির হয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন- বলুন, আমার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি অবস্থায় আছেন?
এ সময় আরেকজন বলে উঠলো, যুদ্ধে তোমার প্রাণপ্রিয় স্বামী শাহাদতের অমিয় সুধা পান করেছেন ।
স্বামীর শহীদ হওয়ার খবর শুনে এবারও তিনি ইন্নালিল্লাহ পাঠ করে ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন- তোমরা বলো, দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন আছেন?
এবার অপর এক সাহাবী বলে উঠলেন, তোমার ছেলে শহীদ হয়েছেন।
হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্ভেজাল আশেকা এবারও শুধু ইন্নালিল্লাহ পড়ে পূর্বের কথার পুনরাবৃত্তি করলেন । বললেন- তোমরা দয়া করে বলো, রাহমাতুল্লিল আলামীন কেমন আছেন ?
এ মুহূর্তে আরেক সাহাবী বললেন, ওহুদের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তোমার ভাই শহীদি মর্যাদা লাভ করেছেন।
নবী প্রেমিক এ আনসারী মহিলা ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদেও বিচলিত না হয়ে কেবল ইন্নালিল্লাহ পাঠ করে পূর্বের প্রশ্নই উত্থাপন করলেন ।
অবশেষে লোকজন বললো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল আছেন এবং মদীনায় ফিরে আসছেন ।
এবার আনসারী মহিলা বললেন, দেখো, আমার মনকে আমি কোনো ভাবেই বুঝাতে পারছি না। তোমরা বলো, রাসূল (সা.) কোথায় আছেন? যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নিজ চোখে তার বরকতময় দিদার লাভ না করবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমার মনে স্থিরতা আসবে না ৷
লোকজন একদিকে ইশারা করে বললো, তিনি ঐখানে আছেন। তখন সেই মহিলা সাহাবী দৌড়ে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক নজর দেখে আপন চক্ষুকে শীতল করলেন। অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বললেন-
হে আল্লাহর রাসূল! আপনার দর্শন লাভের পর যাবতীয় বিপদ আমার নিকট তুচ্ছ। আপনার নূরানী অবয়বের বরকতপূর্ণ দিদার লাভ করে আমি সব দুঃখ ভুলে গেছি। আমার মাতা পিতা আপনার উপর কোরবান হউক । আপনি জীবিত এবং সহীহ সালামতে থাকার পর যে কোনো লোক মারা গেলেও আমার কোনো পরওয়া নেই ।
মুহতারাম পাঠক-পাঠিকা! এ আনসারী সাহাবীর মাঝে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহব্বত ও ভালোবাসা কত গভীর ছিলো, তা আলোচ্য ঘটনা দ্বারা সহজেই অনুমান করা যায়। প্রকৃতপক্ষে খাঁটি মুমিনের পরিচয় তো এটাই। এ যেন এ হাদীসেরই হুবহু বাস্তবায়ন যার মধ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত খাঁটি মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ আমি তোমাদের কাছে তোমাদের পিতা, সন্তান এবং সমস্ত মানুষের চাইতে বেশি প্রিয়পাত্র না হবো। -(বুখারী শরীফ)
ওগো করুণাময় রাব্বুল আলামীন! তুমি তোমার অসীম দয়ায় আমাদের সবাইকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রকৃত আশেক হওয়ার তাওফীক দাও । আমীন
সূত্র: রৌশন সেতারে। সহায়তায় ফাযায়েলে আমাল ।
লেখক: মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। বই: নারী জীবনের চমৎকার কাহিনী।
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আশা করি অপূর্ব রাসূল প্রেম (রাসূলের প্রতি ভালোবাসা) গল্পটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে এবং এটি অন্যদের সাথেও শেয়ার করবেন।
Please follow our Facebook, Twitter, Instagram, Linkedin, Pinterest, Tumblr, And Youtube channels for more updates.