বিশ্ব ভালোবাসা দিবস! আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার মেলবন্ধন

ভালোবাসা মানব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব এমনকি মানবতার প্রতিও প্রকাশিত হয় নানাবিধ আঙ্গিকে। সেই ভালোবাসার মহিমা উদযাপনের জন্য প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দিনটি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের এবং উদযাপনের ক্ষেত্রে প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা যুগে যুগে মানুষের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে রেখেছে।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

ভালোবাসা দিবসের সূচনা রোমান সাম্রাজ্যের সময়কাল থেকে। কথিত আছে, তৃতীয় শতাব্দীতে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের শাসনামলে ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজক প্রেমের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিষিদ্ধ বিবাহ সম্পন্ন করতেন। তার এই কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরে তার স্মরণে ভালোবাসা দিবসের প্রচলন শুরু হয়, যা এখন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ভালোবাসা দিবস শুধু একজন বিশেষ ব্যক্তির প্রতি প্রেম প্রকাশের দিন নয়; এটি মানবিকতা, সহমর্মিতা ও সম্প্রীতির প্রতীক। এ দিনে মানুষ প্রিয়জনকে উপহার দেয়, শুভেচ্ছা জানায় এবং ভালোবাসার মূল্যবোধকে নতুন করে উপলব্ধি করে। সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করতেও দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভালোবাসা দিবস পালনের রীতিতে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশে এই দিনটি নানা আয়োজনে পালিত হয়। কেউ ফুল ও উপহার দেয়, কেউবা ভালোবাসার বার্তা পাঠায়, আবার অনেক দেশে বিশেষ নাচ-গান ও রোমান্টিক ডিনারের আয়োজন করা হয়।

প্রতি বছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিশ্বব্যাপী নানা চ্যারিটি ইভেন্ট, বিশেষ অফার, প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য বিশেষ ভ্রমণ প্যাকেজসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। কিছু দেশে এই দিনটি ভালোবাসার প্রতীক স্বরূপ বৃক্ষরোপণ, রক্তদান কর্মসূচি এবং দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের মাধ্যমে পালিত হয়।

ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতীক হলো লাল গোলাপ। এছাড়াও চকলেট, শুভেচ্ছা কার্ড, কবিতা ও উপহার আদান-প্রদান করা হয়। ফ্রান্সের ‘প্রেমের শহর’ প্যারিসে এদিনে বিশেষ আয়োজন হয়, যেখানে যুগলরা প্রেমের প্রতীক তালা ঝুলিয়ে শপথ নেয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘কিউপিডস অ্যারো’ নামে একটি জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশে ৯০-এর দশকের শেষের দিকে ভালোবাসা দিবস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে এটি একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। তরুণ-তরুণীরা এই দিনে লাল বা রঙীন পোশাক পরে, প্রিয়জনকে ফুল ও উপহার দেয় এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কনসার্ট, নাটক, কবিতা আবৃত্তি ও বিশেষ ডিনারের আয়োজন করা হয়।

ভালোবাসা দিবস শুধু একদিনের জন্য নয়, বরং ভালোবাসা প্রতিদিনের। এটি কেবল প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য নয়, বরং পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী ও সমাজের সকল মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিন। এই দিনটি আমাদের শেখায়, ভালোবাসাই মানব জীবনের আসল শক্তি। আসুন, আমরা ভালোবাসার গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রতিদিন ভালোবাসাকে ছড়িয়ে দিই, যাতে পৃথিবী আরও সুন্দর হয়ে ওঠে।

উৎসর্গ: প্রিয়তমা সহধর্মিণী সাগুফতা রায় দিয়া! 🌹❤️
লেখক- প্রকৌশলী অর্পণ পাল, বাংলাদেশ।

1 thought on “বিশ্ব ভালোবাসা দিবস! আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার মেলবন্ধন”

  1. আপনার লেখনির হাত দারুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কে আপনি অনেক ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছেন যা আমি মনে করি অনেকের মনের ভিতর থেকে ভালোবাসার দিবস সম্পর্কে নেতিচাবক ধারণা দূর হবে। এগিয়ে যান।

    Reply

Leave a Comment

Discover more from Amar Bangla Post

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading