এক ফোঁটা চোখের পানি – ইসলামিক গল্প ২০২৩

এক ফোঁটা চোখের পানি, হলো একটি ইসলামিক গল্প। আল্লাহর দরবারে এক ফোঁটা চোখের পানি মূল্য কত তা সম্মানিত লেখক গল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। গল্প প্রিয় পাঠক পাঠিকাদের জন্য “এক ফোঁটা চোখের পানি” গল্পটি এখানে তুলে ধরা হলো।

এক ফোঁটা চোখের পানি! ইসলামিক গল্প ২০২৩
Photo by Ali Arapoğlu from Pexels.

সাহাবীদের গল্প: এক ফোঁটা চোখের পানি! 

মানুষ কাঁদে। বিভিন্ন কারণে কাঁদে। সে বিপদ-মসিবতের সম্মুখীন হয়ে যেমন কাঁদে, তেমনি কাঁদে আনন্দের আতিশয্যেও। আবার কখনো কখনো পাপ করার পর অনুতপ্ত হয়ে অনুশোচনার অশ্রুও সে ঝরায়। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে ছোট্ট বালকের মতো ।

আল্লাহ পাক কান্নাকে অত্যন্ত ভালবাসেন। পছন্দ করেন। বান্দা যখন কোনো গুনাহ করে চরমভাবে লাঞ্ছিত হয়; অনুশোচনার আগুন তার ভিতরটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয়; ঝরঝর করে ঝরতে থাকে অনুতপ্ত হৃদয়ের তপ্ত অশ্রু, তখন আল্লাহ পাকের রহমতের সাগরে জোশ্ উঠে। ফলে এরূপ ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা কেবল ক্ষমার ঘোষণাই দেন না, বরং তাকে পূর্বের চেয়ে অধিক মর্যাদাকর স্তরে উন্নীত করেন। অন্তর্ভুক্ত করে নেন নৈকট্যশীল বান্দাদের মধ্যে।

এক হাদীসে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দু’টি চক্ষুর উপর জাহান্নামের আগুন হারাম। প্রথমত: যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে। দ্বিতীয়ত: যে চক্ষু ইসলাম ও মুসলমানদের হেফাজতের জন্য জাগ্রত রয়েছে।

অপর এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম এবং যে চক্ষু নাজায়েজ দেখা থেকে বিরত রয়েছে তার উপরও জাহান্নামের আগুন হারাম এবং যে চক্ষু আল্লাহর রাস্তায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে তার উপরও জাহান্নামের আগুন হারাম।

অন্য এক দীর্ঘ হাদীসের শেষাংশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলার নিকট বান্দার তিনটি কাজ অতীব প্রিয়-

  • (ক) জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাহে শক্তি ব্যয় করা
  • (খ) পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্রন্দন করা
  • (গ) অনু কষ্টের সময় ধৈর্য ধারণ করা । 

উপরোক্ত হাদীসসমূহ এবং সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা একথা স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হলো যে, চোখের ঐ পানি যা আল্লাহর ভয়ে নির্গত হয় তার মূল্য অনেক বেশি। এর দ্বারা বান্দা অতি অল্প সময়ে মাওলা পাকের নিকটবর্তী হতে পারে। পরিগণিত হতে পারে তার প্রিয় বান্দা হিসেবে। আর এ জন্যই মানুষের প্রকাশ্য শত্রু শয়তানের নিকট অনুতাপের অশ্রু অত্যন্ত অপছন্দনীয়। সে কিছুতেই গুনাহগারদের চোখের পানিকে বরদাশত করতে পারে না। কারণ সে জানে যে, বান্দা হাজার হাজার গুনাহ করে যে পরিমাণ আল্লাহ থেকে দূরে সরবে, অল্প সময় অনুতাপ ও অনুশোচনার অশ্রু ফেলে সে অনেক বেশী আল্লাহর নিকটবর্তী হয়ে যাবে । নিম্নে এ ধরনের একটি ঘটনাই পাঠক সমীপে উল্লেখ করছি।

ছোট্ট একটি গৃহ । এরই এক কোণে বিশ্রাম নিচ্ছেন রাসূলের প্রিয় সাহাবী হযরত মুআবিয়া (রা.)। একটানা দীর্ঘক্ষণ মানুষের অভাব অভিযোগ শ্রবণের ফলে তিনি এখন ভীষণ ক্লান্ত । তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন তিনি ।

হঠাৎ কারো ডাকে হযরত মুআবিয়া (রা.)-এর ঘুম ভেঙ্গে যায়। তিনি উঠে বসলেন। এদিক ওদিক তাকালেন। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না । ভাবলেন, কে আমাকে ঘুম থেকে উঠাল? দরজা-জানালা বন্ধ ৷ কোনো মানুষেরতো ভিতরে আসার উপায় নেই । তাহলে ঘটনা কি?

মুআবিয়া (রা.) বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। তন্ন তন্ন করে গোটা কামরা তালাশ করলেন। হঠাৎ দেখলেন, একটি লোক দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে । তার মুখখানা কালো কাপড়ে ঢাকা ৷

: কে তুমি? মুআবিয়া (রা.) কঠিন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।

: আমি আপনার এক অতি পরিচিত ব্যক্তি ।

: কি তোমার নাম?

: আমার নাম সবাই জানে। আমি ইবলিস

: অভিশপ্ত ইবলিশ। তুই এখানে কেন। কি মতলব নিয়ে এখানে এসেছিস?

: হযরত! রাগ করবেন না। অন্য সময় আমি মন্দ উদ্দেশ্য নিয়ে আপনার নিকট আসলেও এখন কিন্তু মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছি।

: বল, তোমার মহৎ (!) উদ্দেশ্যটা কি?

: জনাব ! নামাজের সময় শেষ হয়ে আসছে, তাই আপনাকে জাগিয়ে দিয়েছি। যেন মসজিদে গিয়ে যথাসময়ে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হন। আপনার নিশ্চয় জানা আছে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- সময় শেষ হওয়ার আগেই জলদি ইবাদত আদায় কর ।

: আমি এতো বোকা নই যে তোর একথা বিশ্বাস করব! তোর কথা তো ঐ চোরের ন্যায় হলো, যে ঘরে চুরি করতে এসে বলে যে, আমি পাহারা দিতে এসেছি। সুতরাং তোর কথা সম্পূর্ণ মিথ্যে। যদি নিজের মঙ্গল চাস্ তবে সত্য কথা খুলে বল।

: মুহতারাম! আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমিও তো এক সময় আল্লাহর রহমতের সমুদ্র থেকে পানি পান করেছি। তাঁর সন্তুষ্টির বাগান থেকে পরিতৃপ্ত হয়েছি। আজ কোনো এক কারণে তাঁর অভিসম্পাতের পাত্রে পরিণত হয়েছি। তথাপি তাঁর অনুগ্রহের দ্বার তো একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। তাই এ অভিশপ্ত জীবনেও মাঝে মাঝে ভাল কাজ করে তাঁকে স্মরণের স্বাদ অনুভব করি। অন্তরের মণিকোঠায় শান্তি খুঁজি।

: কথাটি সত্য। তবে তোর বেলায় নয়। কারণ, আজ পর্যন্ত তুই লক্ষ লক্ষ মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছিস। মানুষের মঙ্গল তোর উদ্দেশ্য নয়। মনে রাখবি, কোনো প্রকার চালাকি কিংবা বাকপটুতা দেখিয়ে তোর শেষ রক্ষা হবে না । হে অভিশপ্ত! বল, তুই কেন এবং কি উদ্দেশ্যে আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়েছিস?

: হযরত! আমার প্রতি আপনাদের স্বভাবগত বৈরীতা আছে। আপনারা আমাকে দু’চোখে দেখতে পারেন না, তাই আমার কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না। আসলে আমার কাজ হলো, সৎলোকদের সৎকাজের দিকে এবং অসৎলোকদের পাপ কাজের দিকে দিকে উদ্বুদ্ধ করা ।

এবার মুআবিয়া (রা.) অত্যধিক রাগান্বিত হলেন। তিনি দাঁতে দাঁত পিষে বজ্রকন্ঠে বললেন, শয়তান কোথাকার! আবারো বলছি কথার মারপ্যাচ খাটানোর চেষ্টা করবি না। আসল উদ্দেশ্যটা খুলে বল্ । নইলে.. মুআবিয়া (রা.)-এর কথা শেষ হলো না । এরই মধ্যে ইবলীস বলে উঠল-

কারো প্রতি খারাপ ধারণা জন্মালে তার সত্য কথাটি শত দলিল প্রমাণ দিয়ে উপস্থাপন করলেও মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না । কারণ একবার মনে সংশয়ের সৃষ্টি হলে দলিল প্রমাণ দ্বারা সেই সংশয় আরো বৃদ্ধি পায় ৷ আমার অপরাধ শুধু এখানেই যে, আমি একটি ভুল করে বসেছিলাম। এতে গোটা দুনিয়ায় আমার দুর্নাম রটে গেছে। এখন অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে পাপ করে, আর সে পাপের অভিসম্পাত আমার উপর এসে পড়ে। এছাড়া সত্যবাদী বা মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার এমন কি কষ্ঠিপাথর আপনার নিকট আছে যে, আপনি আমাকে বারবার মিথ্যুক সাব্যস্ত করছেন? ইবলীস কিছুটা উত্তেজিত হয়েই কথাগুলো বলল।

মুআবিয়া (রা.) বললেন- হ্যাঁ, আমার নিকট সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার কষ্টিপাথর অবশ্যই আছে । তা এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

“মিথ্যা অন্তরে সংশয়ের জন্ম দেয় আর সত্য মনে স্বস্তি আনয়ন করে ৷”

অর্থাৎ মিথ্যা মানুষের অন্তরকে অস্থির করে তুলে। শান্ত মনকে অশান্ত করে। দিল কিছুতেই তখন স্থির হয় না। পক্ষান্তরে সত্য কথায় অন্তরে স্বস্তি আসে, দিল শান্ত হয় এবং নিজে তা গ্রহণ করতে উদ্বেলিত হয়। হে বিতাড়িত শয়তান! আমি মহান আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহে · আমার চরিত্রকে কুপ্রবৃত্তির চাহিদা, লোভ ও হিংসা থেকে পবিত্র করে নিয়েছি। আমার দিল এ পরিমাণ পবিত্র ও আলোকিত হয়ে গেছে যে, আমি সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে সক্ষম।

হে অভিশপ্ত! জবাব দে এবং সত্য করে বল কেন তুই আমাকে ঘুম থেকে ডেকে জাগিয়ে তুলেছিস। কেননা, তুই মানুষের প্রকাশ্য শত্রু ৷ তুই চাস প্রতিটি মানুষ যেন এমন গভীর ঘুমে আছন্ন থাকে, যাতে তার নামাজ কাযা হয়ে যায়। এ পর্যায়ে এসে হযরত আমীরে মুআবিয়া (রা.) শয়তানকে শক্ত করে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফেললেন এবং বললেন, এবার সত্য কথা না বলা পর্যন্ত তোকে ছাড়ছি না৷

শয়তান এবার বিপাকে পড়ে গেল। সে বাধ্য হলো সত্য কথা বলতে। কেননা, এতক্ষণে তার সকল প্রকার ধোঁকাবাজী ও ছল-চাতুরীর মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেছে। সে বলল-

দেখুন জনাব! আমি আপনাকে এ জন্য ঘুম থেকে জাগ্রত করেছি যেন আপনি জামাতের সাথে নামাজ আদায় করে আশ্বস্ত হন এবং এই ভেবে মনে মনে তৃপ্তি অনুভব করেন যে, আমি ফরজ নামাজ আদায় করতে পারলাম । নতুবা আপনার অভ্যাস আমার ভাল করেই জানা আছে যে, যদি ঘুম কিংবা অন্য কোনো কারণে আপনার এক ওয়াক্ত নামাজও ছুটে যায়, তাহলে সমগ্র দুনিয়া আপনার সামনে অন্ধকার হয়ে আসে। সীমাহীন পেরেশান ও অস্থির হয়ে পড়েন আপনি। এমনকি এর জন্য আপনি অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ হয়ে এত বেশি কান্নাকাটি ও অশ্রু বিসর্জন দেন যা আপনাকে সময় মত নামাজ পড়ার চেয়েও অধিক সম্মানজনক স্থানে উন্নীত করে দেয় । আর আপনি এত সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হওয়াটা আমার একেবারে সহ্যের বাইরে। কিছুতেই আমি এটাকে বরদাস্ত করতে পারি না । তাই আমি আপনাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলেছি। নইলে নামাজ আমার সহ্যের বস্তু ছিল কোন কালে যে, তার জন্য আমি আপনাকে জাগিয়ে তুলব !

ইবলীসের এ বক্তব্য শুনে হযরত মুআবিয়া (রা.) বললেন, হ্যাঁ, এবার তুই সত্য কথা বলেছিস্। বাহ্যত তুই আমাকে ভালোর দিকে আহবান করলেও তোর উদ্দেশ্য ভাল নয়। তোর মতলব খুবই খারাপ। তুই চাস আমি অনুতপ্ত হৃদয় নিয়ে আল্লাহর দরবারে যেন হাজির হতে না পারি এবং চক্ষুদ্বয় থেকে অনুশোচনার অশ্রু ঝরাতে না পারি। কারণ, মু’মিন ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়ে যে অশ্রু বিসর্জন দেয়, তা আল্লাহর দরবারে তাকে অধিক সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করে। আর তোর জন্য তা দেখা দেয় অত্যধিক মর্মজ্বালা হয়ে ।

প্রিয় মুসলিম ভাইগণ! আমি আগেও বলেছি এবং এখনও বলছি যে, আল্লাহর ভয়ে কিংবা তাঁর স্মরণে কান্নাকাটি করা অনেক বড় নিয়ামত । বড় ভাগ্যবান ঐ সমস্ত ব্যক্তি যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা এ নিয়ামত দান করেছেন। হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে, সে ঐ পর্যন্ত জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত দুধ স্তনের মধ্যে পুনঃ প্রবেশ না করে।

অর্থাৎ দুধ স্তনের মধ্যে প্রবেশ করা যেমন অসম্ভব, তেমনি তার জাহান্নামে প্রবেশ করাও সেরূপ অসম্ভব । আরেক হাদীসে আছে-

যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে, এমনকি তার চোখের এক ফোঁটা পানিও মাটিতে পড়েছে, কিয়ামতের দিন তাকে কোনো আজাব দেওয়া হবে না ।

সুতরাং আমার সকল পাঠক-পাঠিকা ও মা-বোনদের বলছি- আসুন, আজ থেকেই আমরা দিবা-রাত্রির একটি নির্জন প্রহর বেছে নেই এবং ঐ সময় আল্লাহ তা’আলাকে গভীরভাবে স্মরণ করি। অতীতের গুনাহের কথা মনে করে বারঝর করে কাঁদতে থাকি । অনুতপ্ত হৃদয় থেকে অনুশোচনার অশ্রু বিসর্জন দেই। আমার বিশ্বাস, আমাদের এ অশ্রু কখনোই বৃথা যাবে না, যেতে পারে না। হাদীস শরীফে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যেদিন আল্লাহর ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া হবে না, সেদিন আল্লাহ তা’আলা সাত ব্যক্তিকে আপন রহমতের ছায়ার নিচে আশ্রয় দান করবেন। তন্মধ্যে একজন হলো ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে বসে আল্লাহর জিকির করে এবং তার চক্ষু থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকে। বুখারী, মুসলিম

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে চক্ষু থেকে আল্লাহর ভয়ে সামান্য মাছির মাথা পরিমাণ পানিও বের হয়েছে আল্লাহ পাক ঐ চেহারাকে দোজখের জন্য হারাম করে দিয়েছেন ৷ তিনি আরও বলেন- মানুষের অন্তর যখন আল্লাহর ভয়ে কাঁপতে থাকে তখন গাছের পাতার মতো তাঁর পাপসমূহ ঝরে যায়।

হযরত উকবা ইবনে আমের (রা.) একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামকে জিজ্ঞেস করেন- হে আল্লাহ রাসূল! নাজাতের উপায় কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আপন জিহ্বাকে সাবধানে চালনা কর। ঘরে বসে থাক এবং আপন অপকর্মের জন্য কাঁদতে থাক ৷

একদা আম্মাজান হযরত আয়েশা (রা.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার উম্মত থেকে কেউ কি বিনা হিসাবে বেহেশতে প্রবেশ করবেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হ্যাঁ, যে আপন গুনাহকে স্মরণ করে কাঁদতে থাকে (সে বিনা হিসেবে বেহেশতে প্রবেশ করবে)। অন্য এক হাদীসে আছে, দু’টি ফোঁটা আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয়। একটি অশ্রুর ফোঁটা, অন্যটি আল্লাহর রাস্তায় পড়া রক্তের ফোঁটা।

হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাযীঃ) বলেন, যার কান্না আসে সে তো কাঁদবেই আর যার কান্না আসে না সে কমপক্ষে কান্নার ভান করবে ।

মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদের (রা.) চোখের পানি মুখে এবং দাঁড়িতে মুছে দিতেন এবং বলতেন- বর্ণিত আছে, জাহান্নামের আগুন ঐ স্থান স্পর্শ করে না যেখানে কান্নার পানি পৌঁছায় ।

হযরত ছাবেত বানানী (রহঃ)-এর চোখে বেদনা অনুভূত হলে তিনি ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার বললেন-আপনি কান্না বন্ধ করলেই চোখ ভাল হয়ে যাবে। জবাবে তিনি বলেন- কান্না বন্ধ করা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয় । কেননা, ঐ চক্ষুর কি মূল্য আছে যে চক্ষু কাঁদে না ।

এযীদ ইবনে মাইসারা (র.) বলেন, মানুষ সাত কারণে কেঁদে থাকে। যথা-

  • ১) আনন্দের দরুন।
  • ২) পাগলামির দরুন।
  • ৩) ব্যথার কারণে।
  • ৪) ভয় পেলে।
  • ৫) দেখানোর জন্য।
  • ৬) নেশা অবস্থায়।
  • ৭) আল্লাহর ভয়ে ।

শেষোক্ত কান্নাই এমন কান্না যার একটি মাত্র ফোঁটা অগ্নির সমুদ্রকে নিভিয়ে দিতে সক্ষম ।

কা’আব আহবার (রা.) বলেন, যার হাতে আমার জান সেই আল্লাহর কসম করে বলছি- আল্লাহর ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে চেহারা ভিজিয়ে ফেলা আমার নিকট পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ সদকা করার চেয়েও অধিক পছন্দনীয়৷

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে উল্লিখিত ঘটনা ও হাদীসসমূহ থেকে শিক্ষা নিয়ে আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে চোখের পানিতে বুক ভাসানোর অভ্যাস গড়ে তোলার তৌফিক নসীব করুন। আমীন ।

আর পাঠক-পাঠিকাদের সমীপে আরজ হলো, এ বিশেষ মুহূর্তে আপনারা অধম লেখক ও তার পরিবার পরিজনকে যেন ভুলে না যান । হতে পারে আপনাদের এ নেক দোয়া ও সুদৃষ্টি তাদেরকে সফলতার স্বর্ণ শিখরে পৌছে দিবে এবং কিয়ামতের কঠিন দিনে নাজাতের অসিলা হবে । হে দয়াময় প্রভু! তুমি আমাদের সকলের উপর অনুগ্রহ বর্ষণ কর। তোমার হুকুমগুলো একশভাগ মানার তৌফিক দাও। আমীন । ছুম্মা আমীন৷  

টুকরো কথা।

শরীয়তের একটি বিন্দু মুছে যাওয়া আসমান জমীন স্থানচ্যুত হওয়ার চাইতেও গুরুতর। হযরত ঈসা (আঃ)

গল্পের লেখক: মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। গল্পের বই: অশ্রুভেজা কাহিনী – সিরিজ ৮ থেকে। 

প্রিয় পাঠক পাঠিকা। এক ফোঁটা চোখের পানি গল্পটি ডাউনলোড করতে চান? 👉 Download PDF এ ক্লিক করুন।

সাহাবীদের জীবন থেকে আরও ইসলামিক গল্প!

০১. যদি পেতাম এমন শাসক (ইসলামিক সত্য গল্প) 

০২. আপন পর সবই সমান (ইসলামিক গল্প)

০৩. সত্য মানুষকে মুক্তি দেয় (ইসলামিক সত্য গল্প)

০৪. বিশ্বস্ত রাখাল (রাখাল ছেলের গল্প ১)

Please follow our Facebook, Twitter, Instagram, Linkedin, Pinterest, Tumblr, And Youtube channels for more updates.

Leave a Comment