অসুখে তেজপাতা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
তেজপাতার বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomum tamala. তেজপাতা চেনেন না এমন লোক বোধ হয় আমাদের দেশে নেই। যারা দুধ ছাড়া চা পছন্দ করেন, তাদের অনেকেই চা-য়ে তেজপাতা দেওয়াটাকে ভালো মনে করেন। কেউ কেউ গলা বসে গেলে তেজপাতার চা খেতে চান। এছাড়াও শরীরের রং ফিরিয়ে আনার জন্য, ক্ষুধা বাড়াতে অনেকে খাবারে তেজপাতা পছন্দ করেন। তেজপাতা খেলে নাকি রক্তের শক্তি বাড়ে। তা যাই হোক, শরীরের প্রয়োজনে তেজপাতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
তেজপাতার গাছ আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকাতে হয়। এই গাছ কিছুটা মোটা এবং শক্ত। গাছটি মাঝারি মাপের। তেজ
পাতার গাছ থেকে গন্ধ বের হয়। পাতাগুলো ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা হয়। তেজপাতার পাতা প্রথমে লাল খয়েরি এবং পরে সবুজ দেখায়। মার্চ এপ্রিল মাসে তেজপাতা গাছে ফুল ও ফল আসে। ফল পেকে গেলে দেখতে কালো হয়।
তেজপাতা গাছের ছাল খেলে পেটফাঁপা, গণোরিয়া ইত্যাদি রোগ ভালো হয়। এছাড়া পাকস্থলির ক্ষমতা বাড়াতে, জরায়ুর ব্যথা, প্রস্রাবের কষ্ট, বিছার হুলের ব্যথা কমাতে তেজপাতা গাছের ছাল ব্যবহার করা হয়। তেজপাতার চিকিৎসা দিয়ে আমবাত, বাত ইত্যাদি অনেক অসুখ ভালো করা যায়। তেজপাতার ফল থেকে এক ধরনের তেল পাওয়া যায়, যা অনেক অসুখ ভালো করতে কাজে লাগে। তেজপাতা দিয়ে অনেক সাধারণ রোগ ভালো করা যায়। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক তেজপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও গুণাগুণঃ
অসুখে তেজপাতা খাওয়ার নিয়ম
০১. ঘুমের ঝিমুনিঃ ঘুমের ঝিমুনি একটি অসুখ। এ সমস্যা দূর করতে তেজপাতার চিকিৎসা নেয়া যায়। প্রথমে ৫-৭ গ্রাম তেজপাতা ৩-৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে থাকতে চুলা থেকে নামাতে হবে। তারপর একটু ঠান্ডা হলে সেটি খেতে হবে। এভাবে দিন পনেরো খেলে সমস্যা দূর হবে।
০২. চুলকানিঃ কারো চুলকানি হলে, ৫ গ্রাম তেজপাতা বেটে ৫/৬ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। তারপর রোজ ২-৩ বারে সিদ্ধ পানিটুকু খেয়ে নিতে হবে। এভাবে কয়েকদিন খেলে চুলকানি ভালো হয়ে যাবে।
০৩. চেহারায় লাবণ্যঃ চেহারায় লাবণ্য বাড়াতে তেজপাতার ভেষজ চিকিৎসা নেয়া যায়। ৫-৬ গ্রাম তেজপাতা বেটে থিঁতিয়ে নিয়ে ২ কাপ গরম পানিতে ১০-১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর ছেঁকে নিয়ে দিয়ে দু’বার খেতে হবে। এইভাবে দিন পনেরো খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
০৪. লাল রঙের প্রস্রাবঃ বদহজম হলে, রাত জাগলে, খাবার-দাবারে অনিয়ম হলে কিংবা বেশি ছোটাছুটি করলে অনেকের প্রস্রাব লাল রঙের হয়ে থাকে। এ রকম পানিতে ২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং দিনে ২ বার খেতে হবে। এভাবে ৩/৪ দিন খেলে প্রস্রাব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
০৫. স্বর ভাঙ্গাঃ সর্দির কারণে অনেকের গলার স্বর ভেঙ্গে যায়। তখন ৫-৭ গ্রাম তেজপাতা থিঁতিয়ে ৩-৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। তারপর এক কাপ পানি থাকতে চুলা নামিয়ে ভালো মতো ছাঁকতে হবে। ৫-৬ ঘন্টার মধ্যে ৩/৪ বারে একটু একটু করে খেলে গলার স্বর আবার ভালো হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ লবঙ্গের গুণাগুনঃ খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
০৬. দাদঃ দাদ হলে তেজপাতার চিকিৎসা অনেক উপকারি। ৫ গ্রাম তেজপাতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ করুন। তারপর পানিটা ছেঁকে নিয়ে খেয়ে নিন। এছাড়া ওই সিদ্ধ করা পানিতে তুলা ভিজিয়ে নিয়ে দাদের জায়গাটা মুছে ফেলুন। এভাবে কয়েকদিন করলে দাদে উপকার পাওয়া যাবে।
০৭. অরুচিঃ খাওয়াতে অরুচি দেখা দিলে, তেজপাতা পানিতে সিদ্ধ করুন। এবার ছেঁকে সেই পানি দিয়ে কুলি করলে অরুচি সেরে যায়।
০৮. শরীরের দুর্গন্ধঃ কখনো কখনো ঘেমে গেলে মানুষের শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এতে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। অথচ তেজপাতা ভালো করে বেটে গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়।
০৯. বেশি ঘাম হওয়াঃ শরীরে ঘামের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিংবা ঘামাচি হলে তেজপাতা বাটা গায়ে মেখে আধা ঘন্টা পইর গোসল করতে হবে। এতে করে বেশি ঘামাটা বন্ধ হবে এবং ঘামাচি দূর হয়ে যাবে।
১০. ফোঁড়াঃ গরমের দিনে কারো কারো ফোঁড়া হয়। এসব ফোঁড়ায় তেজপাতা বেটে লাগাতে পারেন। এতে ফোঁড়ার ব্যথা ও সেই সাথে ফোঁড়ার ভেতরে যে চাকার মতো আঁটি থাকে, তা কমে যাবে।
নোটঃ তেজপাতা আমাদের নানা উপকারে আসে। তাই, আমাদের বাড়ির আশেপাশে দু’কয়েকটা তেজপাতা গাছ লাগাতে পারি। এতে আমাদের রান্নার কাজও চলবে, সেই সাথে ঘরে বসে অনেক অসুখ-বিসুখের ঔষধও পাওয়া যাবে। তাই আসুন-না, আজ-ই একটি তেজপাতা গাছ লাগাই।