জনাব শামীম খন্দকার। ঢাকাস্থ একটি চাইনিজ হোটেলের ম্যানেজার। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী সদর থানার হাজীপুর গ্রামে। হোটেলে তিনি সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দীর্ঘসময় দায়িত্ব পালন করেন। যখন তখন বাড়ি আসতে পারেন না। কারণ পরের চাকরি বলে কথা।
ঢাকায় অবস্থানকালে দিবা-নিশি সব সময় মায়ের কথা মনে পড়ে শামীম সাহেবের। মায়ের জন্য চিন্তাও হয় তার। মাঝেমধ্যে তিনি ভাবেন—মা আমাকে কত কষ্ট করে লালন-পালন করেছেন। নিজে না খেয়ে আমাকে খাইয়েছেন। লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করে তুলেছেন। কোনোদিন আমাকে পিতার অভাব বুঝতে দেননি। আজ সেই মা বয়সের ভারে দুর্বল। নিজে ঠিকমত হাঁটাচলা করতে পারে না। রান্নাবান্না করতে কষ্ট হয়। ছোট ভাইটা কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে মারা গেল। সে আর কোনোদিন ফিরে আসবে না। এমতাবস্থায় আমার উচিত ছিল, মায়ের কাছে থেকে তার সেবা যত্ন করা। খেদমত করা। কিন্তু কী করব আমি? আমি যে অপারগ! চাকুরীর জন্য বাধ্য হয়েই আমাকে ঢাকা থাকতে হচ্ছে। চাকুরি ছেড়ে দিয়ে মায়ের খেদমতে চলে গেলে সংসারই বা কীভাবে চলবে?
আবার তিনি ভাবেন—আমি ঢাকা আছি তাতে কী? আমি যদি বিয়ে করে মায়ের সেবার জন্য স্ত্রীকে বাড়িতে রাখি, তাতেই তো মায়ের খেদমতের কাজটা হয়ে যায়। তখন আমি দেরী করে বাড়িতে গেলেও তেমন কোনো অসুবিধা হবে না। হ্যাঁ, দুঃখিনী মায়ের দুঃখ লাঘবের জন্য বিয়ে আমাকে করতেই হবে। এছাড়া আমার সামনে দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই।
শামীম সাহেবের ইচ্ছা ছিল একটু স্বনির্ভর হয়ে কিছু পয়সা হাতে জমিয়ে তারপর বিয়ে করবেন। কিন্তু মায়ের খেদমতের কথা চিন্তা করে একদিন তিনি বিয়ে করার পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলেন। মাকেও জানালেন সেকথা। তবে সমস্যা হলো বিয়ে তিনি কাকে করবেন? কোথায় পাবেন এমন মেয়ে, যে তার মায়ের যথাযথ খেদমত করবে? নিজের মায়ের মতো সেবা করবে?
শিক্ষিত মেয়েরা সভ্য হয়, ভদ্র হয়—এ ছিল শামীম সাহেবের দৃঢ় বিশ্বাস। তিনি মনে করতেন—মেয়েরা যত শিক্ষিত হবে, বড়দের প্রতি ততই তাদের শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে; অশিক্ষিত মেয়েরা গুরুজনদের কদর কী-ই বা বুঝবে? কাজেই তিনি চিন্তা করে দেখলেন, মায়ের সেবাযত্নের জন্য তার প্রয়োজন একটি উচ্চ শিক্ষিতা মেয়ে। তাই মায়ের অনুমতিক্রমে এমনই একটি মেয়েকে খোঁজ করতে লাগলেন তিনি।
আব্দুর রহমান সাহেব তার ঘনিষ্ট বন্ধু। একদিন তিনি শামীম সাহেবকে একটি উচ্চ শিক্ষিতা পাত্রীর সন্ধান দিলেন। মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে অনার্স করেছে। নাম শান্তা। বাড়ি ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে। মেয়ের বাবা একজন সরকারী কর্মকর্তা। এসব শুনে শামীম সাহেবের মনে আশার সঞ্চার হলো। কারণ, মায়ের খেদমতের জন্য তিনি তো এমন একটি উচ্চ শিক্ষিতা মেয়েই খুঁজছিলেন। তাই ওই মেয়েকে হাত ছাড়া করলেন না তিনি। তড়িঘড়ি বিয়ে করে ঘরে তুললেন।
শান্তাকে বিয়ে করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এলেন শামীম সাহেব। মা মরিয়ম তো এমন পুত্রবধূ পেয়ে খুব আনন্দিত। তাই তিনি শান্তাকে খুব আদর-স্নেহ করতে লাগলেন। এমনকি বেশ কিছুদিন তাঁকে রান্না-বান্না সহ ঘরের কোনো কাজ করতেও দিলেন না।
একদিন বউমার হাতের রান্না খেতে ইচ্ছে হলো মা মরিয়মের। তাই তিনি কিছু চাউল, পরিমান মতো তরিতরকারী ও একটা ইলিশ মাছ শান্তাকে দেখিয়ে বললেন—বউমা! কেন জানি আজ তোমার হাতের রান্না খেতে খুব ইচ্ছা করছে। তাছাড়া পাশের বাড়িতে আমার একটু কাজও আছে। আমি চলে গেলাম। তুমি রান্নাটা সেরে রেখো। কেমন? এ বলে তিনি পাশের বাসায় গিয়ে ফাহিমের মায়ের সাথে আলাপ জুড়ে দিলেন। অতঃপর সেখানে কয়েক ঘন্টা সময় কাটিয়ে খানা খাওয়ার সময় হলে বাড়িতে ফিরে এলেন।
বাড়িতে ফিরে রান্না ঘরে ঢুকে অবাক হলেন মরিয়ম বেগম। একি! রান্নার উপকরণাদি যেভাবে তিনি রেখে গিয়েছিলেন, সেভাবেই পড়ে আছে এখনো। পাকানো হয়নি কিছুই। এদিকে শান্তা খুবই শান্তির সাথে তুলতুলে নরম বিছানায় শুয়ে নাক ডেকে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। আর তার মাথার উপর শোঁ শোঁ আওয়াজে ঘুরছে বৈদ্যুতিক ফ্যান।
বউমা! ও বউমা! এত বেলা হলো, এখনো যে পাক-শাকের কিছুই হয়নি? উঠো মা উঠো। যাও। তাড়াতাড়ি কিছু রান্না করে নিয়ে এসো। দুপুরের খাওয়ার সময় যে একেবারে চলে যাচ্ছে!
শাশুড়ির ডাক শুনে ঘুম থেকে জেগে চোখ দুটো কচলে শান্তা বলল, আম্মা! আমি যে রান্না করতে জানিনা। এ কাজ আমি কোনোদিন করিনি। হঠাৎ করে রান্না করতে গেলে কি থেকে আবার কি হয়ে যায় এই ভয়ে আমি রান্না করিনি। তাছাড়া আমার আজ খেতেও ইচ্ছে করছে না।
বউমার কথা শুনে মরিয়ম বেগম মাথায় হাত দিলেন। বিশাল আকাশটা যেন তার মাথায় ভেঙ্গে পড়ল। কারণ এমনটি তিনি কখনো আশা করেননি। মনে মনে বলেন—ছেলে শামীম উচ্চ শিক্ষিতা বউ তড়িঘড়ি করে বিয়ে করেছে আমার খেদমতের জন্য। আর সেই বউ কিনা রান্নাটুকু পর্যন্ত করতে জানে না!
মরিয়ম বেগম বললেন, ঠিক আছে। কোনো অসুবিধে নেই। তুমি আমার সাথে রান্না ঘরে চলো। কয়েকদিনের মধ্যেই তোমাকে সবকিছু শিখিয়ে দেব।
না, এসব আগুন-টাগুন আমার একদম ভালো লাগে না। আমি আগুন সহ্য করতে পারি না। তাই রান্না শেখার আমার দরকার নেই। ইচ্ছেও নেই। রান্নার ব্যাপারে যা করার আপনিই করুন।
বউমা! একি বলছ তুমি?
হ্যাঁ, আমি যা বলার বলেছি। আমার পক্ষে রান্না বান্নার কাজ করা মোটেও সম্ভব নয়। তাই কোনোদিন আমাকে রান্নাঘরের আশেপাশেও যেতে বলবেন না।
মরিয়ম বেগমের আশা নিরাশায় পরিণত হলো। অবশেষে কী আর করবেন তিনি! বাধ্য হয়ে নিজেই সেদিন রান্না করলেন।
এভাবে প্রতিদিন উচ্চশিক্ষিতা পুত্রবধূর খেদমত করতে থাকেন শাশুড়ি। রান্নার যাবতীয় কাজ তিনি একাই করেন। মাছ-গোশত কাটাকুটি করেন নিজেই। তরিতরকারীও বানান তিনিই। আর শান্তা স্বীয় সাজগোজ ও ঘর গোছানো নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আহা! জীবনের শেষ বয়সে, যেখানে শাশুড়ি ছিলেন খেদমতের পাওনাদার, সেখানে ছেলের উচ্চ শিক্ষিতা বউয়ের খেদমত করতে করতে প্রাণ তার যায় যায় অবস্থা।
ওদিকে শামীম সাহেব বেজায় খুশি। ভাবছেন, নিশ্চয়ই আমার শিক্ষিতা স্ত্রী মায়ের যথাযথ খেদমত করে চলেছে। এতদিনে হয়তো মায়ের মনও জয় করে নিয়েছে ও।
দীর্ঘদিন পর শামীম সাহেব বাড়িতে এলেন। মায়ের চেহারাপানে চোখ পড়তেই চমকে ওঠলেন। বললেন—আম্মাজান! আপনার মুখখানা এমন মলিন কেন? আপনি কি অসুস্থ?
-নারে বাবা! আমি অসুস্থ নই।
-তবে আপনাকে এমন লাগছে কেন?
-সংসারে কাজকর্মের চাপ একটু বেশি কিনা তাই!
-সংসারের চাপ আপনার উপর? কেন? শান্তা কোথায়?
-সে তার রুমে বিশ্রাম করছে হয়তো।
-রান্না বান্না করছেন আপনি! আর ও করছে বিশ্রাম? কারণ কি? ওর কি কোনো অসুখ-বিসুখ হয়েছে?
-না বাবা। বউমার অসুস্থতার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
-তবে ও রান্না করছে না কেন?
-ও নাকি এসব কোনোদিন করেনি।
-তাতে কি হয়েছে? সে শিখে নিবে।
-কী করে শিখবে বাবা! রতার নাকি আগুনের তাপ মোটেই সহ্য হয় না। তাই তার রান্না শেখারও নাকি কোনো দরকার নেই।
-বলেন কি আম্মাজান! এতবড় স্পর্ধা ওর?
মায়ের কাছ থেকে এসব শুনে শামীম সাহেব হতবাক হলেন! ভাবতে লাগলেন, তাহলে কি আম্মাজানকে মৃত্যু পর্যন্ত এভাবেই কষ্ট করতে হবে? সারাজীবন কি তিনি একটু শান্তির মুখও দেখতে পাবেন না? হায়, এখন আমি কী করব! আমি কি শান্তাকে ছেড়ে নতুন করে বিয়ে করব? নাকি তাঁকে নিয়েই চলতে থাকব? নাহ! আমি আর ভাবতে পারছি না। এ বলে তিনি বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিলেন।
শামীম সাহেব বিছানায় শোয়া। তার পাশেই নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে শান্তা। এসময় তার মনে পড়ে যায় পাশের বাড়ির নাসিরের কথা—
নাসির ছিল শামীম সাহেবের সমবয়সী। কয়েক বছর আগে ও একটি কওমী মাদরাসার ছাত্রীকে বিয়ে করেছে। মেয়েটি খুব দীনদার। নাম রাবেয়া। সে তার শাশুড়িকে কোনো কাজ করতে দেয় না। সংসারের সবকাজ একাই করে। আবার প্রতি সপ্তাহে একদিন গ্রামের মহিলাদের দ্বীনী শিক্ষা দেয়। কিতাবী তালিম করে। রান্না-বান্না ও সংসারিক কোনো কাজেই জুড়ি নেই তার।
রাবেয়ার আরেকটি অন্যতম গুণ হলো, সে তার স্বামীকে পাগলের মতো ভালোবাসে। নাসির যখন তার কর্মস্থল থেকে রাত নয়টার দিকে বাড়িতে ফিরে, তখন রাবেয়া যে কোনো কাজেই থাকুক না কেন, এক রকম দৌড়ে এসে ঘরের দরজায় হাসিমুখে স্বামিকে স্বাগত জানায়। সালাম দেয়। স্বামীর হাতে কোনো সামানা থাকলে তা তার হাত থেকে নিজের হাতে নিতে নিতে বলে, আহা! কত ভারি জিনিস; এটি বহন করে নিয়ে আসতে নিশ্চয়ই আপনার অনেক কষ্ট হয়েছে। দেন দেন আমার হাতে দেন। আমিও আপনার কষ্টের একটু হলেও শরীক হই। এরপর সে তার স্বামীকে নির্জন কামরায় হাত ধরে টেনে নেয়। তারপর মোসাফাহার কাজটি সেরে নিজের ওড়না দিয়ে মুখের ঘাম মুছে দেয়। আর বড়ই মমতার সুরে বলে-প্রিয়তম! বান্দী আপনার খেদমতে হাজির। বলুন আপনার এখন কি প্রয়োজন। আপনার মন খুশি করার জন্য আমাকে এখন যা-ই করতে বলবেন, তা-ই আমি করব। মোটকথা, রাবেয়া তার স্বামীর আরাম-আয়েশ ও খুশির প্রতি এতটাই খেয়াল রাখে যে, নাসিরের মুখ থেকে অনেক সময় অনিচ্ছায়ই বের হয়ে যায়—হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমন এক প্রতিপ্রাণা অনুগত স্ত্রী দান করেছ, যার শোকর আদায় করার মতো ভাষা আমার নেই। হে আল্লাহ! আমি শুনেছি, ভালো স্ত্রীরা তাদের স্বামির খেদমত করে, স্বামীর কথামত চলে। কিন্তু রাবেয়া আমার জন্য যা করে, কোনোদিন আমি ভাবতেও পারেনি যে, কোনো স্ত্রী তার স্বামীর জন্য এত কিছু করতে পারে। তাছাড়া রাবেয়া আমার আব্বা-আম্মার জন্য যা কিছু করে তাও এক কথায় অতুলনীয়। সেতো তার শ্বষুর-শাশুড়িকে নিজের পিতা-মাতার মতোই ভক্তি করে, শ্রদ্ধা করে, খেদমত করে। হে রাহমানুর রাহীম দয়াময় প্রভু! তুমি আমার রাবেয়াকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সুউচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করো। তার মনের যাবতীয় বাসনা তুমি পূরণ করো। আর দুনিয়ার সকল স্ত্রীকে তার মতো অনুগত স্ত্রী বানিয়ে দাও।
এসব ভেবে শামীম সাহেব আক্ষেপ করেন আর মনে মনে বলেন, আমার ঘরে এটা আমি কি নিয়ে এলাম! সে নাকি ভার্সিটিতে পড়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছে? তবে কি এ-ই তার শিক্ষার গুণ? শান্তা আমার খেদমত না হয় না-ই করল, কিন্তু সে যদি আমার মায়ের খেদমত করত, তার কাজে তাঁকে সহযোগিতা করত, তবু আমার মনে কোনো দুঃখ থাকত না। কিন্তু ও তো দিন দিন আমাদের পেরেশানী কেবল বাড়িয়েই চলছে। কোনো মেয়ে যদি এভাবে চলে তবে তো তাঁকে নিয়ে সংসার করা বড় কঠিন।
পরদিন সকাল বেলা স্ত্রীকে তিনি প্রথমবারের মতো কিছু উপদেশ দিয়ে ঢাকায় চলে যান।
এরপর দিন দিন বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক অবনতির দিকে যেতে থাকে। শান্তা এখন শাশুড়ির সঙ্গে তর্ক করতেও কোনোরূপ দ্বিধাবোধ করে না। প্রায়ই সে উচ্চ শিক্ষার অহঙ্কার জাহির করে। একদিন তো এমন হয় যে, শাশুড়িকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাপের বাড়িতেই চলে যায়।
কিছুদিন পর শামীম সাহেব বাড়িতে এসে মায়ের চেহারা দেখে কেঁদে ফেলেন। তারপর মায়ের মুখ থেকে সবকিছু শুনতে পেয়ে যারপর নাই ব্যথিত হন। অতঃপর খোঁজ-খবর নিয়ে যখন জানতে পারেন এবং নিশ্চিত হন যে, শান্তাই অপরাধী, তখন তিনি শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে শোধরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এভাবে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরও শামীম সাহেব যখন দেখলেন যে, ওর কোনো পরিবর্তন নেই, তখন বাধ্য হয়েই তাঁকে তালাক দেন। সেই সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে, জীবনে কখনো উচ্চ শিক্ষিতা অহঙ্কারী মেয়েকে বধূ বানিয়ে ঘরে আনবেন না। বরং বন্ধু নাসিরের মতো দীনদার ও ধার্মিক মেয়েকেই বিয়ে করবেন।
সহযোগিতায়, সাদিয়া য়ামিন, কালিগঞ্জ, কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা।
লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম
এরপর পড়ুন : কৃপণের ঘরে দানশীল বউ
For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.